কৃষি কাজে বিজ্ঞান রচনা। Krishi kaje biggan rochona (২০২৫)

বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ।কৃষি একটি আদিম পেশা।প্রাচীন যত পেশা আছে মধ্যে কৃষি একটি ।মানব সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষ জিবীকার পথ হিসেবে কৃষি বেছে নিয়েছিলো।মানব জীব প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে সেই সাথে পরিবর্তন হচ্ছে সভ্যতা।জনসংখ্যা বৃদ্ধি, পরিবেশ পরিবর্তন ও আধুনিক জীবনের চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে কৃষিকাজেও এসেছে নানা আধুনিক পরিবর্তন।আধুনিক যুগ হলো বিজ্ঞানের যুগ ।

ভূমিকা 

বিজ্ঞানের অবদানের জন্যই কৃষি ক্ষেত্রে নতুন নতুন বিপ্লব ঘটছে।বিজ্ঞানের মাধ্যমে  তৈরি প্রযুক্তি ও পদ্ধতি ব্যবফার করে কৃষকরা তাদের কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ ফসল উৎপাদন করতে পারছে।কৃষি কাজে বিভিন্ন ভাবে বিজ্ঞান গুরুত্বপুর্ণ অবদান রাখছে।  বিজ্ঞানের অবদান কৃষি খাতকে দিয়েছে নতুন গতি । এখনকার কৃষিকাজ শুধু কৃষকের ঘাম নয়, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রযুক্তির ছোঁয়া, বিজ্ঞানের গবেষণা ও উন্নত পরিকল্পনা।  

কৃষি ও বিজ্ঞান

কৃষি হলো এমন একটি কাজ, যার মাধ্যমে মানুষ মাটি, পানি, আলো ও বীজ ব্যবহার করে ফসল উৎপাদন করে। ফসল ফলানো,শাক সবজি চাষ, ফলমুল উৎপাদন,মাছ চাষ পশু-পাখি পালন এই সব কিছুই কৃষির অন্তর্ভুক্ত।কৃষি  শুধু খাদ্য উৎপাদনের জন্য নয় বরং একটা দেশের অর্থনীতি ও মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নত করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রাখে।কৃষির মাধ্যমে ফসল উৎপাদন করে  মানুষ নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে আবার বাজারে বিক্রি করে আয়ও করতে পারে।বিশেষ করে কৃষি প্রধান দেশ গুলোতে কৃষিই হচ্ছে জীবনের মুল চালিকাশক্তি।তাই কৃষির উন্নয়ন মানের দেশের উন্নয়ন। 

উন্নত বিশ্বে কৃষি

মাটি প্রস্তুত করে শস্য উৎপাদন করার পদ্ধতিকেই কৃষিকাজ বলে।কৃষিকাজ হলো এমন একটি কাজ,যার মাধ্যমে মানুষ মাটিতে চাষ করে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করে।ধান, গম, ভুট্টা, শাকসবজি, ফলমূল, এমনকি পশুপালন ও মাছ চাষও কৃষিকাজের অন্তর্ভুক্ত। আগে কৃষিকাজ সম্পূর্ণ হাতে এবং প্রাকৃতিক ভাবে হতো যা অনেক সময় সাপেক্ষ ছিলো আর কষ্টও হতো অনেক।কিন্ত কৃষি কাজে বিজ্ঞানের আবির্ভাবের কারণে সব কিছু অনেক সহজ হয়েছে এবং সময় ও কষ্ট উভয়ই কমে গেছে।আধুনিক যন্ত্র,সার,উন্নত বীজের কারণে অল্প সময়ে ভালো ফসল ফলানো হয়ে উঠেছে।আর কৃষিকাজ শুধু জীবিকার জন্য নয় বরং দেশের অর্থনীততেও গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রাখে। 

আরো পড়ুন: সিভি লেখার নিয়ম

কৃষিকাজে বিজ্ঞানের  সূচনা

একটা সময় কৃষিকাজ সম্পুর্ণ প্রকৃতি  এবং পরিশ্রমের উপর নির্ভর করতো। কৃষকদের আবহাওয়ার উপর নির্ভর করতে হতো। সেই সময়ের কৃষকরা লক্ষ্য করেছিল যে সেচের ফলে ফসলের ফলন বৃদ্ধি পায়।তখন তারা কৃত্তিম সেচ পদ্ধতি চালু করে। এভাবেই প্রয়োজনের তাগিদে সময়ের সাথে সাথে আস্তে আস্তে বিজ্ঞান কৃষির জগতে প্রবেশ করে এবং নতুন কিছু সূচনা করে।উন্নত বীজ আবিষ্কার,রাসায়নিক সার, কীটনাশক,উন্নত সেচ ব্যবস্থা- এগুলোই কৃষিতে বিজ্ঞানের প্রথম অবদান।তারপর বিভিন্ন যন্ত্রপাতি যেমন ট্রাক্টর,পাওয়ার টিলার,হারভেস্টার ইত্যাদি কৃষির জগতে ঢুকে কৃষি কাজকে আরও সহজ করে দিয়েছে। এভাবেই আস্তে আস্তে কৃষি কাজে বিজ্ঞানের ব্যবহার শুরু হয়েছে এবং সেটা বেড়ে আরও উন্নত হচ্ছে ।

কৃষিকাজে বিজ্ঞানের ভূমিকা 

কৃষি কোন সহজ সাধারন কাজ নয়,এটা একটা দেশের মানুষের জীবনের সাথে মিশে থাকা একটা অংশ।আমাদের খাবার , অর্থনীতি এবং জীবনযাত্রার ভিত্তি কৃষির উপর নির্ভরশীল।এক সময় আমাদের কৃষকেরা রোদে পুড়ে, ঘাম ঝরিয়ে হাতে কাজ করতেন। তারা মাটির ভাষা বুঝতেন, কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা রোগবালাই এলে কিছুই করার থাকত না।কিন্ত বিজ্ঞানের আবির্ভাবের কারনে কৃষিতে বিশাল বিপ্লব এসেছে।উন্নত প্রযুক্তি, বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহারে কৃষির বিপ্লব ঘটেছে। কৃষি কাজে বিজ্ঞান অনেক ভাবেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।কৃষি ক্ষেত্রে বিজ্ঞান অনেক ভাবে ব্যবহার করা হয় । 

সেচ ব্যবস্থায় বিজ্ঞানঃ প্রাচীন কালে কৃষকরা বৃষ্টির পানির উপর নির্ভরশীল ছিলো।সময়মতো বৃষ্টি হলে ফসল ভালো হতো আর বৃষ্টি না হলে ফসল ভালো হতো না।সবই ছিলো প্রকৃতি নির্ভর।কিন্ত বিজ্ঞানের আবির্ভাবের পর জমিতে কৃত্তিম সেচ ব্যবস্থা চালু হয়। বিজ্ঞান দিয়েছে উন্নত সেচ ব্যবস্থা যেমন গভীর নলকূপ, ড্রিপ ইরিগেশন, স্প্রিঙ্কলার সেচ ইত্যাদি। এতে পানির অপচয় কমে এবং গাছ সঠিক পরিমাণ পানি পায়, ফলে ফসলের  ফলনও বাড়ে অনেক গুণে। 

উন্নত বীজঃ কৃষি কাজে বিজ্ঞান আসার আগে বেশি খরা হলে বা বন্যা হলে বীজ নষ্ট হয়ে যেত ফলে ফসল হতো না। কিন্ত বিজ্ঞানীরা গবেষনা করে অনেক উন্নত জাতের বীজ তৈরি করেছে যেগুলো বন্যা,খরা এবং রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। এই বীজ গুলো মূলত তুলনামূলকভাবে কমে সময়ে বেশি ফসল দেয়।ফলে ফসলের ফলন বেশি হয় এবং ফসল ভালো হয়। 

সার ও কীটনাশকঃ বিজ্ঞান মাটি পরীক্ষা করে মাটির গুনাগুণ বিশ্লেষন করে কোন জমিতে কেমন সার,কী পরিমান সার প্রয়োগ করতে হবে সেটার পদ্ধতি তৈরি করেছে। এতে মাটি উর্বর হয়,ফসল ভালো হয়, ফসলে পোকা লাগতে পারে না। এবং সমানভাবে কীটনাশক ব্যবহার করলে বৈজ্ঞানিক নিয়ম মেনে চললে ফসলের ফসলও ভালো হয় এবং পরিবেশ দুষণও হয়না।

আধুনিক যন্ত্রপাতিঃ আগে মানুষের সব কাজ নিজেই করতে হতো।যেকোন কাজ করতে অনেক সময় লাগতো কিন্ত এখন কৃষি কাজে নানা রকম আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার হচ্ছে যেমন ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার, হারভেস্টার, সেচ মেশিন, রাইস প্ল্যান্টার ইত্যাদি।এসব যন্ত্র ব্যবহার করে কৃষক খুব অল্প সময়ে কম পরিশ্রমে বেশি জমিতে কাজ করতে পারবে তাতে সময়,খরচ,শ্রম সব কিছুই বেচে যাবে।

তথ্য প্রযুক্তিঃ তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষকরা মোবাইল ফোন,ইন্টারনেট,বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করে আবহাওয়ার খবর,ফসলের বাজার দাম,বিভিন্ন রোগ বালাই সম্পর্কে আপডেট তথ্য পাচ্ছে। ফলে মানুষ আগে থেকেই সব বিষয়ে সতর্ক থাকতে পারছে।

কৃষি কাজে বিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা

কৃষিকাজে বিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।বর্তমানে পৃথিবীতে জনসংখ্যা বেড়েই চলেছে কিন্ত কৃষি জমি বাড়ছে না বরং কমেই যাচ্ছে।জনসংখ্যা বাড়ার ফলে কৃষি জমিতে বসতবাড়ি তৈরি করার জন্য কৃষি জমি কমে যাচ্ছে।তাই ফসলও কমে যাচ্ছে। কিন্ত কৃষি কাজে বিজ্ঞানের আবির্ভাবের জন্য আমরা অনেক সহায়তা পাচ্ছি। কৃষি আমাদের খাদ্যের মূল উৎস আর কৃষিকে উন্নত করার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের গুরুত্ব অপরিসীম।একসময় কৃষিকাজ ছিল প্রকৃতিনির্ভর ও পরিশ্রমসাপেক্ষ।তবুও ফসল কম হতো এবং রোগ বালাই বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ হতো এবং পর্যাপ্ত ক্ষতি হতো। কিন্ত বিজ্ঞানের আবির্ভাবের ফলে পুরো ছবিটা বদলে যায়।কৃষি কাজে বিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা অনেক।যেমন-

ফসলের ফলন বৃদ্ধিঃ বিজ্ঞানীরা উচ্চ ফলনশীল জাত তৈরি করেছে যা খাদ্য উৎপাদন ও খাদ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি করে। উন্নত মানের বীজ ব্যবহার করে কম জমিতে বেশি ফসল উৎপাদন করা সম্ভব।

ফসলের রোগ শনাক্ত ও দমনঃ বিজ্ঞানীরা কীটনাশক এবং আক্রমনাত্নক সহ আরও অনেক পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে যেগুলো ফসলকে রোগের হাত থেকে রক্ষা করে।আর বিজ্ঞান দিয়ে রোগ আগে থেকেই চেনা যায় এবং সময় মতো সঠিক কীটনাশক ব্যবহার করে রোগ দমন করা যায় । 

মাটির গুণাগুণ বিশ্লেষণঃ ফসল উৎপাদনে মাটির গুণাগুণ বিশ্লেষণ করা অত্যন্ত জরুরি তাই বিজ্ঞানীরা অনেক পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে।কোন জমিতে কোন ফসল ভালো হবে তা বৈজ্ঞানিকভাবে জানা যায়।

ফসল সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণঃ বিজ্ঞানসম্মতভাবে ফসল সংরক্ষণ ও প্যাকেজিং করলে ফসল নষ্ট কম হয়, কৃষক লাভবান হন।

উপসংহার

কৃষি ও কৃষিকাজ মানুষের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রাচীনকাল থেকে কৃষি ছিল প্রধান জীবিকা, তবে বিজ্ঞানের হাত ধরে এই পেশায় এসেছে অসাধারণ অগ্রগতি। কৃষিকাজে বিজ্ঞানের সূচনা যেমন আমাদের পদ্ধতিগত পরিবর্তন করে দিয়েছে, তেমনি এর প্রয়োজনীয়তা দিন দিন আরও বেড়েই চলেছে। আধুনিক প্রযুক্তি, উন্নত যন্ত্রপাতি, বা এবং তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে কৃষি ক্ষেত্র অনেক  উন্নত হয়েছে ।জনগনের খাদ্য  নিশ্চিত করা, কৃষকের আয় বৃদ্ধি করা  ও পরিবেশবান্ধব চাষাবাদ এগুলো সবই  সম্ভব হয়েছে বিজ্ঞানের অবদানেই। তাই বলা যায়, কৃষিকাজে বিজ্ঞানের ভূমিকা কেবল গুরুত্বপূর্ণই নয়, বরং আগামী দিনের উন্নত কৃষির মূলভিত্তি।

Leave a Comment