মেয়েদের চুল পড়ার কারণ ও মেয়েদের চুল পড়া থেকে প্রতিকার

মেয়েদের চুল পড়ে যাওয়াকে ডাক্তারি ভাষায় অ্যানড্রোজেনেটিক অ্যালোপিসিয়া বলে। লপড়া নারীদের একটি অতি পরিচিত সমস্যা। দিনে যদি ৮০টি চুল পড়ে তাহলে এটিকে স্বাভাবিক হিসেবেই নেবেন, তবে এর চেয়ে বেশি হলেই নিতে হবে বাড়তি যত্ন। মেয়েদের মাথার উপরিভাগের চুল ও দু’পাশের চুল পাতলা হয়ে যায়। এক-তৃতীয়াংশ নারীর এ সমস্যা হয়। প্রতিদিন ১০০ থেকে ১২৫টি চুল পড়ে স্বাভাবিকভাবেই। 

মেয়েদের চুল পড়ার কারণ

চুল পড়ে যাওয়া তখনই সমস্যা, যখন দিনে ১২৫টির বেশি চুল পড়ে এবং সেই চুল গজায় না। চুল পড়ে যাওয়াকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়—অ্যানাজেন ইফফ্লুডিয়াম ও টেলোজেন ইফফ্লুভিয়াম।  কেমোথেরাপির জন্য যখন চুল পড়ে, তখন তাকে অ্যানাজেন ইফফ্লুডিয়াম বলে। আর চুলের ফলিকল যখন রেস্টিং স্টেজে যায়, তখন তাকে টেলোজেন ইফফ্লুভিয়াম বলে। সময়ের অভাবে নিয়মিত চুল আঁচড়ানোর কথা ভুলে যায় অনেকে। প্রতিদিন অন্তত পাঁচ-দশ মিনিট চুল ভালোভাবে আঁচড়ানো দরকার। এতে চুলের গোড়ায় রক্ত চলাচল বাড়ে। চুলের স্বাস্থ্যও ঠিক থাকে। 

হরমোনের পরিবর্তন

হরমোনের পরিবর্তনের সঙ্গে নারীদের চুল পড়ার সম্পর্ক আছে। গর্ভাবস্থায় কিংবা জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়া বন্ধ করলে চুল পড়তে পারে। ওজন কমানোর জন্য অতিরিক্ত ডায়েট করা অনেক সময় চুল পড়ার কারণ। অবশ্যই ডায়েটিশিয়ান, নিউট্রিশনিস্ট কিংবা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার তালিকা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। থাইরয়েডিজমের ফলেও চুল পড়তে পারে। 

শারীরিক অসুস্থতা

শরীরে হরমোনের পরিমাণ কমবেশি হলে চুল উঠবে। আমারা অনেকেই ভেজা চুল আঁচড়াই। চুল যখন ভেজা থাকে তখন চুলের গোড়া নরম থাকে। ওই অবস্থায় আঁচড়ালেও চুল পড়বে। শারীরিক অসুস্থতা, অপারেশন হওয়া ও মানসিক চাপ চুল পড়ার অন্যতম কারণ। এসব ক্ষেত্রে দেখা যায়, চুল ঝরে গেলেও আর নতুন চুল গজায় না এবং চুল বাড়ে না। শরীর সারাতে ব্যস্ত থাকে সব শক্তি এবং অনাদরে পড়ে যায় চুল। এসব ক্ষেত্রে চুল পড়তে থাকে তিন মাস, আবার চুল গজাতে সময় লাগে তিন মাস। 

পনি যদি জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়া শুরু করেন বা পিল পরিবর্তন করেন তবে তা চুলের ওপর প্রভাব পড়তে পারে। এসব পিলে প্রোজেসটেরন হরমোন থাকে যা চুল পড়ে যাওয়ার কারণ। তাই জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়ার আগে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জানতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নারীদের ক্ষেত্রে মেনোপজের পর অ্যান্ড্রোজেনিক হরমোন বেড়ে গিয়েও চুল পড়া শুরু হয়। পুরুষদের মাথায় টাক পড়ার কারণও হরমোনের আধিক্য।

মেয়েদের চুল পড়া থেকে প্রতিকার

স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পড়লে  চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে হয়ত রক্ত পরীক্ষা করতে হতে পারে। আবার ভিটামিন এ-এর পরিমাণ, আয়রন, থাইরয়েড এসব পরীক্ষাও করা হয়। এর বাইরে যেসব করতে হবে-

ঘুম ও শারীরিক চর্চা

খাদ্যপরিকল্পনা চুল গজানো ও বাড়াতে সহায়ক হতে পারে, চুল পাতলা হয়ে যাওয়া থেকে সুরক্ষা দিতে পারে ও নতুন করে গজিয়ে মাথার চুল আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে। একইভাবে ঘুমও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশেষ করে রাত ১২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত সময়টা– যখন শরীর সেরে ওঠে ও আরোগ্য লাভ করে। রক্তসঞ্চালন বাড়াতে শরীরচর্চা করা যেতে পারে। এতে প্রতিটি কোষ সমানভাবে অক্সিজেন পাবে। আজকের দিনে অহরহ সালফেটমুক্ত শ্যাম্পু উৎপাদন হচ্ছে। এটি মাথার ত্বকে কম প্রদাহ সৃষ্টি করে। আর অতিরিক্ত চুল পড়া বন্ধ করতেও সহায়ক এই শ্যাম্পু। 

চুলের ভিটামিন

আমরা নতুন চুল কোষ গজাব? প্রথমে চুল পড়ার কারণ বের করতে হবে। আমরা নতুন চুল কোষ গজাব? প্রথমে চুল পড়ার কারণ বের করতে হবে। জানতে হবে, এটা কি চিকিৎসা, জিনগত, হরমোন নাকি অসুস্থতা পরবর্তী কারণে ঘটছে। এরপর সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, স্বাস্থ্যকর ও শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনে অভ্যস্ততা গড়তে হবে। তৃতীয়ত, খাবার ও চুলের ভিটামিন অবশ্যই সুষম হতে হবে। চতুর্থ, নতুন চুল গজাতে মাইনক্সিডিল লোশন ব্যবহার করা লাগতে পারে। রোজ রাতে আঙুলের ডগা দিয়ে মাথার তালু হালকা মালিশ করতে হবে। পঞ্চম, চুলের সঠিক পণ্যটি ব্যবহার করতে হবে। 

জবা ফুল

চুল পড়া বন্ধ করতে খুবই কাজে আসে জবা ফুল। চুলের সমস্যা, খুশকি, শুষ্কতা, থেকে চুলকে রক্ষা করে। চুলকে ঘন এবং শক্তিশালী করে তুলতে জবা ফুল খুবই উপযোগী। জবা ফুল প্রাকৃতিক উপাদান। তাই যে কোনও ভাবে এটি চুলে ব্যবহার করা নিরাপদ বলেই মনে করা হয়। চুল সহজেই ভেঙে যাওয়া রোধ করে এই ফুল। চুল পরিচর্যায় অন্যতম উপাদান হিসেবে প্রাচীন যুগ থেকেই নিমের ব্যবহার করা হয়ে আসছে। এমনকী আয়ুর্বেদেও নিমকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। চুলের বৃদ্ধিতে কাজে আসে এই নিম। নিমে উচ্চমাত্রায় ফ্যাটি অ্যাসিড আছে। যা স্ক্যাল্পে জন্য খুবই প্রয়োজন। 

নিম পাতা

স্ক্যাল্পে অতিরিক্ত তেল উৎপাদন বন্ধ করে। চুলের গোড়া শক্ত করতে সাহায্য করে নিম। ১০-১২টা নিম পাতা নিন। সেই পাতাগুলো বেটে নিন। পাতা থেকে বের করে নিন নির্যাস। এটি অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান হিসেবে স্ক্যাল্পে কাজ করবে। নিমপাতার এই মিশ্রণের সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণ অলিভ অয়েল, আমন্ড অয়েল বা নারকেল তেল মিশিয়ে নিন। সেটি সামান্য গরম করে নিয়ে স্ক্যাল্পে মাসাজ করেন।  

আজকের এই পোস্টে আমি আপনাদের সাথে মেয়েদের চুল পড়ার কারণ ও প্রতিকার  জানাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আশা করছি আজকের আর্টিকেলে সে সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দিতে পেরেছি। এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকলে তা কমেন্ট করে জানাতে পারেন।আপনি গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন আমাদের এই পৌষ্টের মাধ্যমে…..

Leave a Comment