স্ত্রী কতৃক তালাকের নিয়ম এবং মোহরানার হিসাব

 বিবাহ বা বিয়ে হল একটি সামাজিক বন্ধন বা বৈধ চুক্তি যার মাধ্যমে দু’জন মানুষের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপিত হয়। তালাকের ক্ষেত্রে মুসলিম আইন অনুযায়ী স্বামীর ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি স্ত্রীর তুলনায়৷ কারণ স্বামী চাইলে কোনরকম কারণ না দেখিয়ে তার স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে৷ কিন্তু স্ত্রীর ক্ষেত্রে তালাকের বিষয়টিতে একটু ভিন্নতা রয়েছে৷ দাম্পত্য সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার অগণিত উদাহরণ সমাজে দৃশ্যমান। দাম্পত্য জীবনে অশান্তির কারণেই স্বামী-স্ত্রীর পরস্পর আলাদা হয়। তালাকের মাধ্যমে এ সম্পর্কের অবসান ঘটে। তবে নারীর বৈধ দুইটি কারণে স্বামীর কাছ থেকে তালাক নিতে পারে। আজ আলোচনা করবো মুসলিম স্ত্রী কর্তৃক বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাক পূর্ববর্তী ও পরবর্তী কিছু অধিকার ও করণীয় সম্পর্কে।

বিবাহবিচ্ছেদ/তালাক কী?

ইসলাম নারীকে তার ইজ্জত রক্ষায়, দাম্পত্য জীবনের শান্তি ধরে রাখতে বৈধভাবে জীবন পরিচালনার পৃথক হওয়ার অধিকার দিয়েছে। এ পরিস্থিতে চাইলে সে স্বামীর কাছ থেকে বৈধভাবেই তালাক গ্রহণ করতে পারে। যার ফলে অবৈধ সম্পর্কে খারাপ পরিণতি ও গোনাহ কিংবা দাম্পত্য জীবনের কষ্ট থেকেও মুক্তি পেতে পারে।  বিবাহবিচ্ছেদ হয় বিয়ের সাময়িক বিরতি বা স্থায়ী বিরতি। আইনানুগ শর্তে বিবাহ বিচ্ছেদ হলো বিবাহ চুক্তি বিলোপ, যার ফলে উভয় পক্ষ স্বাধীনভাবে তাদের জীবন চালিয়ে যাওয়ার জন্য দুজন থেকে আলাদা হয়। স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক দাম্পত্য সম্পর্ক এমন অবস্থায় পৌঁছায় যে, একত্রে বসবাস করা উভয়ের পক্ষে সম্ভব নয়, সে ক্ষেত্রে তারা উভয়েই কিছু নির্দিষ্ট উপায়ে বিয়েবিচ্ছেদ ঘটাতে পারেন; যার একটি হলো তালাক। 

তালাক দেওয়ার অধিকার বা ক্ষমতা স্ত্রীর কম। আইনে উল্লেখিত কারণ ব্যতীত স্ত্রী তার স্বামীকে তালাক দিতে পারবে না।তবে কাবিন নামার ১৮ নং কলামে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে বিয়ে বিচ্ছেদের ক্ষমতা দেওয়া থাকলে (তালাক-ই-তৌফিজ) স্ত্রী তালাক দিতে পারবে। ‘তালাক’ একটি আরবি শব্দ; যার অর্থ ভেঙে ফেলা, ছিন্ন করা, বা ত্যাগ করা। মুসলিম আইনে তালাক স্বামী-স্ত্রীর একটি বৈধ ও স্বীকৃত অধিকার। অর্থাৎ তালাক হচ্ছে একমাত্র আইনগত পদ্ধতি যার মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। অথবা আইনসিদ্ধ উপায়ে বিবাহবন্ধন ছিন্ন করাকেই তালাক বলে। 

স্ত্রী একক ইচ্ছায় তালাক

থাবিত বিন কায়েসের স্ত্রী রসুলের নিকট আসিয়া বলিল হে আলাহ’র রসুল ! থাবিত বিন কায়েসের চরিত্র বা দ্বীনদারীর উপর আমার কোন অভিযোগ নাই। কিন্তু আমার ভয় হইতেছে আমি আলাহ’র অনুগ্রহের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকিতে পারিব না’ (অর্থাৎ স্বামীর প্রতি কর্তব্যে গাফিলতি হতে পারে − হাদিস ২৪৮৩, হাফেজ আবদুল জলিল)।  ইহাতে রসুল বলিলেন, ‘তুমি কি তাহার বাগানটা ফেরৎ দিতে রাজি ?’ সে বলিল, ‘হ্যাঁ।’ অতএব সে তাহাকে বাগান ফেরৎ দিল এবং রসুল (দঃ) থাবিতকে তালাক দিতে বলিলেন। স্ত্রী তালাক চাইলে কোর্টে মামলা করতে হবে। 

শারিয়া আইনে আছে শারীরিক অক্ষমতা, মারপিট, খরচ না দেওয়া ইত্যাদি বিশেষ দু’একটা কারণের স্পষ্ট প্রমাণ থাকলে কাজী নিজে থেকে বিবাহ বাতিল করতে পারেন। ওসব প্রমাণ না থাকলে কোর্ট স্ত্রীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে স্বামীকে দিয়ে স্বামীর অনুমতির চেষ্টা করবে, স্ত্রী এই ক্ষমতাবলে তার স্বামীকে তালাক দিতে পারে৷ স্ত্রী যদি কাবিননামার ১৮ নাম্বার কলাম অনুসারে তার স্বামীকে তালাক দিতে চাই, সেই ক্ষেত্রে প্রথমে নোটিশ দিতে হবে৷ স্বামী যদি ইউনিয়ন পরিষদের অন্তর্ভুক্ত এলাকার মধ্যে থাকে সে ক্ষেত্রে চেয়ারম্যানের কাছে অথবা স্বামী যদি সিটি কর্পোরেশন এলাকার মধ্যে থাকে সেই ক্ষেত্রে মেয়র কার্যালয়ে নোটিশ দিতে হবে৷ একটা বিষয় মনে রাখবেন চেয়ারম্যান বা মেয়রের কাছে পাঠানো নোটিশের কপি স্বামীর ঠিকনায় অবশ্যই পাঠাতে হবে৷

স্ত্রী তালাক দিলেও কি মোহরানা পাবে

স্ত্রী তালাক দিলেও মোহরানার টাকা তাকে দিতে হবে এবং তালাক কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত ভরণপোষণ করতে হবে। তবে কাবিন নামার ১৮ নং কলামে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে বিয়ে বিচ্ছেদের ক্ষমতা দেওয়া থাকলে (তালাক-ই-তৌফিজ) স্ত্রী তালাক দিতে পারবে। মিলন না ঘটলে এবং মোহরানা সুনির্দিষ্ট হয়ে থাকলে স্ত্রী মোহরানার অর্ধেকের অধিকারী। ১৯৩৯ আইনের ৫ ধারায় স্পষ্টভাবে বলা আছে, এই আইনের কোনো কিছুই কোনো বিবাহিত নারীর বিয়েবিচ্ছেদের ফলে মুসলিম আইনানুসারে তার দেনমোহর বা এর কোনো অংশের ওপর কোনো অধিকারকেই প্রভাবিত করবে না। 

আজকের এই পোস্টে আমি আপনাদের সাথে স্ত্রী কতৃক তালাকের নিয়ম নিয়ম জানাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আশা করছি আজকের আর্টিকেলে সে সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দিতে পেরেছি। এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকলে তা কমেন্ট করে জানাতে পারেন।

 

Leave a Comment