অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের নিয়ম এবং আয়কর দাখিলের সময়

বর্তমান সময়ের সবচাইতে আলোচিত বিষয়ের মধ্যে একটি হচ্ছে আয়কর রিটার্ন। জনমতে এইটা নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। কিভাবে করলে হয়রানি ছাড়া সহজভাবে আয়কর রিটার্ন দাখিল করা যাবে তা নিয়ে সবখানেই আলোচনা হচ্ছে। আবার অনেকেই এখনো সঠিক জানেন না কি কি কাগজপত্র লাগবে এই আয়কর রিটার্ন দাখিলের জন্য।

আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময়

প্রতি বছরে জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত জরিমানা ছাড়া বার্ষিক আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। সেই অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর আয়কর দিবস পালিত হয়। এরমধ্যেই রিটার্ন দাখিল করতে হয়। আয়কর অফিসে, আয়কর মেলায় কিংবা অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়া যায়। সুবিধা অনুযায়ী আপনিও আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারবেন সহজেই।

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের নিয়ম

অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করা হতে পারে সেরা উপায়। অনলাইনে রিটার্ন জমা দিতে অনেকেই দ্বিধায় থাকেন। কীভাবে সব প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করা হবে তা বুঝে উঠতে পারেন না। যারা এই বছর অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে চা্চ্ছেন তাদের জন্য কিছু পরামর্শ থাকছে এই আয়োজনে। প্রথমেই ই রিটার্ন রেজিস্ট্রেশন করার প্রয়োজন হবে। উক্ত কাজের জন্য আপনাকে প্রথমেই চলে যেতে হবে E-Return Registration ওয়েবসাইটে এবং সেখান থেকে মেনু বার থেকে সাইন আপ বাটনে ক্লিক করে একটি একাউন্ট ক্রিয়েট করে নিতে হবে যদি প্রথমবারের মত এই কাজটি করে থাকেন। সাইন আপ করার জন্য আপনার প্রয়োজন হবে – 

  • ট্যাক্স প্রদানকারীর টিন সার্টিফিকেট নাম্বার
  • মোবাইল নাম্বার 
  • ক্যাপচা পূরন 

রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রথমে এই লিংকে ভিজিট করুন- E-Return Registration  প্রথম বক্সে আপনার টিআইন (TIN) নম্বরটি লিখুন। তারপর আপনার নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র দ্বারা বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশন করা আছে এমন মোবাইল নম্বরটি লিখুন (প্রথম শুন্য বাদে)। এরপর ক্যাপচা কোডটি সঠিকভাবে লিখুন এবং সবশেষে Verify বাটনে ক্লিক করুন। মোবাইল ভেরিফিকেশন করতে হবে। Verify বাটনে ক্লিক করার পর আপনার মোবাইলে একটি ৬ সংখ্যার OTP Code পাঠানো হবে। OTP Code লিখা স্থানে ৬ ডিজিটের ওটিপি কোডটি লিখুন এবং আপনি ভবিষ্যতে ই রিটার্ন সিস্টেমে লগ ইন করার জন্য একটি পাসওয়ার্ড সেট করুন।পাসওয়ার্ডটি অবশ্যই ইংরেজিতে Capital Letter + Small Letter + Number + Mark ব্যবহার করে সেট করবেন। যেমনঃ Talukder12 return এরপর Submit বাটনে ক্লিক করে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করুন। আশা করি আপনি সফলভাবে ই রিটার্ন সিস্টেমে নিবন্ধন করেছেন। এবার সিস্টেমে সাইন ইন করে ই রিটার্ন সাবমিট করতে পারবেন।

যে ওয়েবসাইটটিতে সাইনআপ করেছিলেন সেখানে সাইনইন করুন আপনার টিন সার্টিফিকেট, মোবাইল নাম্বার ও ক্যাপচা পূরনের মাধ্যমে। সাইন ইন করার পর যে ড্যাশবোর্ডটি আপনার স্কিনের সামনে আসবে সেখান থেকে স্কিনের বাম পাশের মেনু গুলো থেকে Return Submission অপশনে ক্লিক করুন। এরপর পরের ধাপের কাজ শুরু। এই ধাপের প্রথমেই আপনাকে আয়ের সন ও উৎস সংক্রান্ত তথ্য প্রদান করতে হবে। এগুলো বিস্তারিত অপশন হিসেবে উল্লেখ্য করা হচ্ছে –  

  • Return Scheme এর স্থানে Universal Self অপশনটি দিন, কারন এটা বাংলায় সর্বজনীন স্বনির্ধারনী একটি পদ্ধতি। 
  • Assessment Year এর মধ্যে আপনার কর প্রদানের বছর উল্লেখ্য করুন
  • Income Year এর মধ্যে আপনি যে বছরের ইনকামের অনুযায়ী আয়কর প্রদান করবেন সেই বছর লিখুন। 
  • এই পর্যায়ে আপনি যদি করযোগ্য আয় সীমার মধ্যে ইনকাম করে থাকেন তবে Yes দিবেন। 
  • বাংলাদেশ সরকার অনেক ক্ষেত্রের আয়কে করমুক্ত করে দিয়েছে আপনি যদি তেমন কোনো ক্ষেত্র থেকে আয় করে থাকেন তবে এই খানে Yes অপশনে ক্লিক করুন। 
  • বাংলাদেশি নাগরিক হলে এখানে Resident অপশনটি সিলেক্ট করুন। 
  • Heads of Income অপশনটি হচ্ছে আয়ের উৎস সমূহ উল্লেখ্য করার জন্য। আপনি কোন ক্ষেত্র থেকে আয় করছেন বা কিভাবে আয় করছেন্স এটি সিলেক্ট করে দিবেন। 
  • Any income from the following sources নামক অপশনে থাকা সোর্স গুলো থেকে যদি কোনো সোর্সের মাধ্যমে আপনার আয় হয়ে থাকে তবে সেটি সিলেক্ট করুন অন্যথায় স্কিপ করুন।

আপনি সর্বোমোট কোন কোন উৎস থেকে আয় করেন এবং কত টাকা আয় করেন সেই সকল তথ্য প্রদান করতে হবে এই ধাপে। উল্লেখ্য করার মত যে যে অপশন থাকবে সেগুলো ধাপে ধাপে বুজিয়ে দেয়া হচ্ছে – 

  • Additional Information এর ঘরে আপনাকে আপনার আয়ের উৎসের এলাকা দিতে হবে। দুইটি অপশন দেয়া থাকবে সিটি কর্পোরেশন এবং অন্যান্য 
  • যদি আপনি মুক্তিযোদ্ধা হোন তবে এখানে টিন দিন।
  • আপনি যদি কোনো ধরনের প্রতিবন্ধি ব্যক্তি বা শিশুর পিতা – মাতা হয়ে থাকেন তবে এখানে টিক দিন
  • Claim Tax rebate for investment এর ঘরে টিক তখনই দিবেন যদি আপনি এমন কোনো বিনিয়োগের মাধ্যমে আয় করে থাকেন সেখানে বাংলাদেশ সরকার কর ছাড় দিয়েছে। 
  • পরবর্তিতে আপনি যদি কোনো পাবলিক বা প্রাইভেট কোম্পানির শেয়ার হোল্ডার হয়ে থাকেন তবেই। 
  • IT10B Requirement: আপনার আয় যদি ৪০ লাখ টাকার বেশি হয়ে থাকে তবে অবশ্যই এটির মধ্যে আয় ব্যয়ের হিসাব দেখাতে হবে। যদি তা না হয়ে থাকে তবে এটি পূরণ করা বাধ্যতামূলক নয়। 

যদি আপনাকে কোনো প্রকার কর দিতে না হয় বা payable amount শুণ্য আসে তবে তাকে জিরো রিটার্ন বলা হয়। এক্ষেত্রে আপনার করযোগ্য আয় সীমার মধ্যে আপনার আয় নেই বা আপনার আয়কৃত অর্থর উপর কোনো কর গ্রহন করা হবে না এটাই বুঝায়। 

অফলাইন রিটার্ন – স্কিনের বাম পাশের হলুদ কালারের বাটনে ক্লিক করে আপনার আয়কর রিটার্ন ফরমটি প্রিন্ট করে নিন। এর পর সেটি আপনার এরিয়া ভিত্তিক আয়কর অফিসে জমা দিয়ে দিন। এর জন্য আপনাকে কোনো প্রকার ফি প্রদান করতে হবে না। 

অনলাইন রিটার্ন – তাছাড়া ডান পাশের নীল রঙ্গের বাটনে ক্লিক করার মাধ্যমে অনলাইনে রিটার্ন প্রসেস সাবমিট করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনাকে অফলাইনের মত অফিসে গিয়ে তা জমা দিতে হবে না। এক্ষেত্রে আপনাকে একটি প্রিভিউ দেখানো হবে এবং সবশেষে ভেরিফিকেশন বাটনে টিন চিহ্নতে ক্লিক করে সাবমিট করতে হবে। তারপর পপ আপের মাধ্যমে একটি সতর্কতা দেখানো হবে যেখানে উল্লেখ থাকবে যে আপনি কি রিটার্ন সাবমিট করতে চান কি না। ইয়েস বাটনে ক্লিক করুন। মনে রাখবেন ইয়েস বাটনে ক্লিক করলে আর কোনো ভাবে তা ইডিট করা যাবে না।

আজকের এই পোস্টে আমি আপনাদের সাথে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের নিয়ম জানাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আশা করছি আজকের আর্টিকেলে সে সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দিতে পেরেছি। এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকলে তা কমেন্ট করে জানাতে পারেন।আপনি পল্লী বিদ্যুৎ মিটার আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন আমাদের এই পৌষ্টের মাধ্যমে …… 

Leave a Comment