নিপাহ ভাইরাস হঠাৎ করেই আবার সংক্রমণ ছড়ানো শুরু করেছে। আমাদের দেশে চলতি শীতের মৌসুমে এখন পর্যন্ত ৯ জন নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন এবং তাদের মধ্যে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ পশু থেকে মানুষের মধ্যে এই ভাইরাসটি এসেছে। নিপা ভাইরাসের সংক্রমণ কেরলে মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল। তাই আগাম সতর্কতা নিতে তৎপর পিনারাই বিজয়নের সরকার। আমাদের দেশে খেজুরের রসখেকো বাদুড় হচ্ছে নিপা ভাইরাসের প্রধান উৎস। বাদুড় খেজুরের রস খাওয়ার সময় তাদের মুখ থেকে নিঃসৃত লালা খেজুরের কাঁচা রসের সঙ্গে মিশে রসকে দূষিত করে। নিপাহ ভাইরাস একটি জুনোটিক ভাইরাস। নিপাহ ভাইরাস মস্তিষ্ক বা শ্বসনতন্ত্রে প্রদাহ তৈরির মাধ্যমে মারাত্মক অসুস্থতার সৃষ্টি করে। চলুন জেনে নেওয়া যাক নিপা ভাইরাস সম্বন্ধে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য –
নিপা ভাইরাস কিভাবে সংক্রমণ হয়
আমাদের দেশে এবং ভারতে এই রোগের প্রাদুর্ভাব সংক্রমিত ফলভোজী বাদুড়ের প্রস্রাব অথবা লালা দ্বারা দূষিত ফল বা ফলের পণ্য যেমন, কাঁচা খেজুর রস খাওয়ার ফলে ঘটে। এ সময় গাছগুলোতে রাতের বেলা শুরু হয় বাদুড়ের উৎপাত। তাই সংক্রমণ রোধ করার প্রচেষ্টায় প্রথমে খেজুর রস সংগ্রহের জায়গা অর্থাৎ এই গাছগুলো বাদুড়ের সংস্পর্শে আসা থেকে মুক্ত রাখতে হবে। যেহেতু বাদুড়ই এ ভাইরাস ছড়ানোর প্রধানতম মাধ্যম হিসেবে এখন পর্যন্ত চিহ্নিত, তাই বাদুড় থেকে মানুষকে দূরে থাকার জন্য সচেতন হওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে কাঁচা খেজুরের রস খাওয়া পরিহার করা উচিত।
নিপাহ ভাইরাস ‘১৯৯০’ এর দশকে মালয়েশিয়া প্রথম শনাক্ত হয়। সেখান থেকে শূকরের মাংসের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরে ছড়িয়ে পরে রোগটি। তবে সেসব দেশে এখন আর রোগী দেখা যায় না। ভাইরাস বহনকারী বাদুড় যখন ফলকে কামড়ায়, তখন ভাইরাসটি ফলের মধ্যে প্রবেশ করে এবং তারপরে যারা এটি খায় তাদের সংক্রামিত করে। আমাদের দেশে মেহেরপুরে ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়িতে ২০০১ সালে প্রথম এই ভাইরাস শনাক্ত হয়। আমাদের দেশে এ পর্যন্ত নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ৩২৬ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে, যাদের মধ্যে মারা গেছে ২৩১ জন।
নিপা ভাইরাসের লক্ষণ সমূহ
নিপা ভাইরাস প্রাথমিকভাবে জ্বর, মাথাব্যথা, পেশীতে ব্যথা, বমি, গলা ব্যথা বা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো উপসর্গ দেখা যায়। এর ফলে সংক্রামিত ব্যক্তি শ্বাসযন্ত্রের গুরুতর সমস্যা ও মস্তিষ্কের প্রদাহজনিত মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। অল্পসংখ্যক মানুষ যারা প্রাথমিকভাবে ভালো হয়ে উঠলেও পরবর্তীকালে মস্তিষ্কের সংক্রমণে ভুগতে পারেন। কেউ কেউ নিউমোনিয়া, রক্ত জমাট বাঁধা, বুকে তীব্র যন্ত্রণাসহ তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে আসে।
এমনকি যারা নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওযারা সংক্রমণ থেকে বেঁচে থাকে তারা দীর্ঘমেয়াদী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেমন খিঁচুনি এবং ব্যক্তিত্বের পরিবর্তনে ভুগতে পারে। তাই সবার মধ্যে অবশ্যই সচেতনতা তৈরি করতে হবে। কোনোভাবেই খেজুরের কাঁচা রস বা বাদুড় খাওয়া ফল খাওয়া যাবে না। জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় হাতীবান্ধায় বাদুড়ের আধিক্য ও নিপাহ ভাইরাসের আশঙ্কা শিরোনামে খবর প্রকাশিত হলে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বেড়ে যায়। আমাদের মধ্যে সচেতনতার অভাব আছে। মানুষ সচেতন হলেই নিপাহ ভাইরাস প্রতিরোধ সম্ভব।
নিপা ভাইরাসের চিকিৎসা
নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণের কোন কার্যকরী চিকিৎসা নেই। নিপা ভাইরাসে ছোঁয়াচে রোগের মতই নিপাহ এনকেফালাইটিসও সচেতনতার মাধ্যমে অনেকখানিই প্রতিরোধ করা সম্ভব। নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি যদি শ্বাসকষ্টি বেশি হলে রোগীকে আইসিইউ তে রেখে অক্সিজেন সাপোর্ট ও স্নায়বিক চিকিৎসা দিতে হবে। একজন সাধারণ চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে, যিনি আপনার উপসর্গের তীব্রতার উপর নির্ভর করে আপনাকে একজন সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠাতে পারেন। এজন্য আক্রান্ত ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ বিশ্রাম নিতে এবং প্রচুর পানি ও তরল পান করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এছাড়া উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়, যাতে রোগী উপসর্গ থেকে মুক্তি পায়। এরপর দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। যদিও এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট ওষুধ নেই, টিকাও আবিষ্কৃত হয়নি।
নিপা ভাইরাস প্রতিরোধ
নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণের কোন কার্যকরী চিকিৎসা না থাকায় রোগ প্রতিরোধ করা প্রয়োজনীয়। বাদুড় নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণের প্রধান কারণ, তাই যাদের গৃহপালিত পশু বা খামারের পশু রয়েছে তাদের বাদুড়-দূষিত ফল খাওয়া থেকে বিরত রাখা উচিত। এছাড়া কোনও ব্যক্তি নিপা-য় আক্রান্ত হলে তাঁর আলাদা থাকা উচিত এবং অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। বাদুড়ের বর্জ্যমিশ্রিত খেজুরের রস পান ও বাদুড়ে পুর্ণ কুয়োর জল ব্যবহার না করাই ভালো। এই বিষয়টি বিশেষ করে যারা খেজুর রস সংগ্রহ করে বাজারজাত করে থাকেন বা গাছিদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। যেহেতু এই ভাইরাসটির কোনো প্রতিষেধক নেই। তাই জনসচেতনতা তৈরিই এই রোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র পথ। নিপাহ ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সাবধানতা অবলম্বনই নিপাহ ভাইরাস প্রতিরোধের প্রধানতম উপায়।
আজকের এই পোস্টে আমি আপনাদের সাথে নিপা ভাইরাস থেকে মুক্তির উপায় জানাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আশা করছি আজকের আর্টিকেলে সে সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দিতে পেরেছি। এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকলে তা কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আপনি গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন আমাদের এই পৌষ্টের মাধ্যমে…..

সুপ্রিয় দর্শক আপনাকে স্বাগতম জানাচ্ছি আপনারা যারা বিভিন্ন সমস্যা নিরাময় করার জন্য বিভিন্ন বড় বড় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলো এবং বড় বড় ডাক্তারদের পরামর্শ গ্রহণ করতে চাচ্ছেন তাদের জন্য সকল ডাক্তারের পরামর্শ ও মতামত এবং সময় চিকিৎসা বিষয়ে সকল তথ্য সংগ্রহ করে আপনাদের কাছে আমি উপস্থাপন করব।