অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন ডিজিটাল করার নিয়ম এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদের তথ্যে ভুল রয়েছে? কোন ব্যাপার না। আপনি জন্ম নিবন্ধনের ভুল অনলাইনের মাধ্যমে সংশোধনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। একটি শিশুর জন্মের পর থেকে তাকে সে দেশের রাষ্ট্র প্রদত্ত যে প্রথম স্বীকৃতি অর্জন করে তা হলো জন্ম নিবন্ধন। এখন, অনলাইন জন্ম নিবন্ধন আবেদন করা যায়। এটি শিশুর জন্মের প্রায় দেড় মাসের মধ্যে কিংবা ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন ফরম পূরণ করা বাধ্যতামূলক।

জন্ম নিবন্ধন কি?

বাংলাদেশে ২০০৪ সালে ২৯ নং আইন পাশ করে জন্ম নিবন্ধনের বিষয়টি সকলের আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মূলত কোনো ব্যক্তি জেলা কিংবা ইউনিয়নের অধীনে কিংবা পাড়া মহল্লায় সরকার নিবন্ধিত কোনো ব্যক্তির নিকট গিয়ে। কোন শিশুর নাম তার অভিভাবকের নাম জন্মের সময় তারিখ স্থান এবং সেই সাথে নাগরিকতা ইত্যাদি তথ্য সমূহ প্রদান করে যে ফর্ম বরাবর পূরণ করা হয় সেই ফর্মকে বলা হয় জন্ম নিবন্ধন। 

পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ কোনো না কোনো রাষ্ট্রের অধীনে বসবাস করে থাকে। প্রতিটি মানুষ জন্মের মধ্যে দিয়ে সে দেশের নাগরিকত্ব অর্জন করে থাকে। একটি পরিবারের অধীনে বসবাস করে থাকে। নতুন অতিথির মাধ্যমে পরিবারের মধ্যে যেমন খুশির বন্যা বয়ে যায়। ঠিক তেমনি একটি রাষ্ট্রের মধ্যে নতুন নাগরিক আগমনের মধ্য দিয়ে খুশিতে উজ্জীবিত হয়। নতুন সদস্যের জন্মের পর কোনো রাষ্ট্র থেকে একটি স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। সেই স্বীকৃতির মাধ্যমে ছোট্ট সদস্য রাষ্ট্রের দেওয়া সুযোগ সুবিধাদি ভোগ করতে পারে। পূর্বে শুধু মাত্র হাতে লিখে জন্ম নিবন্ধন রেজিস্ট্রার করার বিধান থাকলেও, সময়ের সাথে সাথে এখন কম্পিউটার টাইপের মাধ্যমে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন তৈরি করা হয়।

জন্ম নিবন্ধনের প্রয়োজনীয়তা

জন্ম নিবন্ধন জাতীয় নাগরিকত্বের প্রদান, এনআইডির এর মতো সমান গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আপনি যখন এনআইডি করবেন তখন আপনার বয়স ১৮ বছর হবে। এর আগে আপনার সকল কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে এই জন্ম নিবন্ধন দিয়ে। তাই একজন ব্যক্তির জীবনে জন্ম নিবন্ধনের গুরুত্ব কতখানি তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু জন্ম নিবন্ধন আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে কি কাজে লাগে তা জেনে নেওয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ।

জন্ম নিবন্ধন অনলাইনে আবেদন করার নিয়ম

র্তমানে প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে। আপনি যদি আপনার সময় বাঁচিয়ে ঘরে বসে জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে চান সেই ক্ষেত্রে আপনার জন্য রয়েছে অনলাইনে আবেদন করার সুব্যবস্থা। অনলাইনে আবেদন করার জন্য আপনাকে কি করতে হবে, তা বিস্তারিত বুঝিয়ে দিচ্ছি। প্রথমে https://bdris.gov.bd/br/application ওয়েবসাইটে যেতে হবে।

ওয়েব সাইটটিতে প্রবেশ করার পর আপনি এমন একটি ইন্টারফেস দেখতে পাবেন। নিচের দিকে তিনটি অপশন দেখতে পাচ্ছেন। জন্মস্থান, স্থায়ী ঠিকানা এবং বর্তমান ঠিকানা। এখান থেকে যে কোন একটি সিলেক্ট করা আবশ্যক। এই বিষয়টি হচ্ছে আপনি আপনার জন্ম সনদ কোথা থেকে সংগ্রহ করতে চাচ্ছেন তা আপনার কাছে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে। একজন মানুষের মূলত তিন ধরনের ঠিকানা থাকে। একটি হচ্ছে জন্মস্থান, অন্য দুটি হল স্থায়ী এবং বর্তমান ঠিকানা। আপনি যদি জন্মস্থান থেকে জন্ম নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করতে চান তাহলে ‘জন্মস্থান‘ সিলেক্ট করবেন। অথবা অন্য যে কোন একটি অপশন সিলেক্ট করতে হবে। এর পরে “পরবর্তী” অপশনটিতে ক্লিক করবেন। 

সেখানে সম্পূর্ণ সঠিক তথ্য দিয়ে আপনাকে আবেদন ফর্মটি পূরণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, আপনি যদি কোনো তথ্য ভুল প্রদান করেন সেই তথ্য সঠিক করার আর কোন উপায় নেই। সেক্ষেত্রে আপনার জন্ম সনদ বাতিল হয়ে যাবে সুতরাং তথ্য সঠিক প্রদান করা খুবই জরুরি। সেই সঙ্গে আপনি যে তথ্যটি প্রদান করছেন সেটি যাচাই করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাওয়া হবে সুতরাং বুঝতেই পারছেন আপনার তথ্য পরিপূর্ণভাবে সঠিক হতে হবে এবং গোছানো হতে হবে।

আবেদন ফরম পূরণ করার সময় একটি বিষয় মাথায় রাখবেন যে অপশন গুলো তে লাল রংয়ের তারকা চিহ্ন রয়েছে সেগুলো অবশ্যই পূরণ করতে হবে। আর যেগুলোর পাশে লাল রঙের তারকা চিহ্ন নেই সেগুলো পূরণ না করলেও চলবে। ফরম পূরণের এক পর্যায়ে এসে আপনি যখন আপনার জন্ম তারিখ সিলেক্ট করবেন তখন আপনার জন্ম তারিখ সঠিক কিনা এটা যাচাই করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আছে কিনা সেটা আপনার কাছে জানতে চাইতে পারে।

সেক্ষেত্রে ছবির মত আপনার কাছে দুটি অপশন থাকবে। যদি আপনার কাছে সেই কাগজপত্রগুলো থাকে তাহলে সবুজ বাটনটিতে (আমার কাছে ডকুমেন্টগুলি আছে) ক্লিক করবেন অন্যথায় লাল বাটনটিতে ক্লিক করতে হবে। ফরমটি পূরণ করা হয়ে গেলে “পরবর্তী” অপশনটিতে ক্লিক করবেন।

আগের ফর্মটি পূরণ করার পর আপনার কাছে নতুন আরো একটি ফর্ম আসবে। এখানে আপনার পিতা এবং মাতার তথ্য চাওয়া হবে। সেক্ষেত্রে তাদের জন্ম নিবন্ধন নাম্বার, তাদের নাম এবং তাদের জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর চাওয়া হবে। সরকারি এই ওয়েবসাইট অনুযায়ী এখানে আপনি যেকোনো একজনের তথ্য প্রদান করলেই হবে। তবে ইউনিয়ন পরিষদ এবং পৌরসভা থেকে বলা হয় দুজনার তথ্য প্রদান করতে। যেহেতু আমরা ইউনিয়ন এবং পৌরসভার কাছে থেকেই আমাদের জন্ম নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করবো সে ক্ষেত্রে দুজনের তথ্য প্রদান করাই ভালো। এখানেও খুব সাবধানতার সঙ্গে বাবা-মায়ের তথ্যগুলো দিয়ে পূরণ করবেন। তারপর “পরবর্তী” অপশনটিতে ক্লিক করবেন।

আপনাকে আবারও জিজ্ঞাসা করা হবে আপনার স্থায়ী ঠিকানা কোনটি। এজন্য অবশ্য এই ওয়েবসাইটটিতে একটি পন্থা অবলম্বন করা হয়েছে। এখানে আপনাকে প্রশ্ন করা হবে নিচের কোন ঠিকানায় আপনি আপনার স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে সিলেক্ট করতে চান কিনা? সেখানে আপনি কোনোটিই নয় সিলেক্ট করবেন।

এর পরে আপনাকে নিচে অপশন দেওয়া হবে জন্মস্থান এর ঠিকানা এবং স্থায়ী ঠিকানা একই। যদি আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় তাহলে সেটা টিকমার্ক দেবেন। এরপর একই প্রশ্ন আবারও জিজ্ঞাসা করা হবে। একই প্রক্রিয়া আবারো রিপিট করবেন। এভাবেই মূলত আপনার স্থায়ী ঠিকানা সিলেক্টেড হয়। তবে যদি কোনো ক্ষেত্রে স্থায়ী ঠিকানা সেলেক্টেড না হয় তাহলে নিজে লিখে স্থায়ী ঠিকানা প্রদান করতে হবে। স্থায়ী ঠিকানা সিলেক্ট হওয়ার পর আপনাকে আবারও “পরবর্তী” অপশনটিতে ক্লিক করতে হবে।

আপনাকে আরো একটি স্টেপ পার করতে হবে। সেখানে আপনাকে জিজ্ঞেস করা হবে যে ব্যক্তির জন্য আপনি এপ্লাই করলেন সেটা কি আপনি নিজে বা অন্য কারো জন্য। যদি আপনার নিজের জন্য হয় তাহলে আপনার নাম আসবে এবং সেইসঙ্গে আপনার ফোন নাম্বার এবং ইমেইল এড্রেস প্রদান করতে হবে। এতে করে আপনার জন্ম নিবন্ধন সম্পর্কিত সকল তথ্য আপনাকে কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এসএমএস বা মেইল করে পাঠানো হবে। আর যদি এটি অন্য কারো জন্য হয় তাহলে সেই ব্যক্তির ফোন নাম্বার এবং জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর সহ অন্যান্য তথ্য প্রদান করতে হবে।

আপনাকে জন্মস্থান ও জন্মতারিখের তথ্য প্রদানকারীর তথ্য দিতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার মেম্বার বা ওয়ার্ড কমিশনারের জন্ম তারিখ নম্বর, এনআইডি নম্বর ও নাম দিতে পারেন। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে আপনার চেয়ারম্যান, মেম্বার বা ওয়ার্ড কমিশনারের জন্ম তারিখ নম্বর, এনআইডি নম্বর ও নাম দিতে হবে। আপনাকে জন্মস্থান ও জন্মতারিখের তথ্য প্রদানকারীর তথ্য দিতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার মেম্বার বা ওয়ার্ড কমিশনারের জন্ম তারিখ নম্বর, এনআইডি নম্বর ও নাম দিতে পারেন। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে আপনার চেয়ারম্যান, মেম্বার বা ওয়ার্ড কমিশনারের জন্ম তারিখ নম্বর, এনআইডি নম্বর ও নাম দিতে হবে।

সাবমিট” বাটনে ক্লিক করার সঙ্গে সঙ্গে আপনার আবেদনটি গ্রহণ করা হবে এবং আপনাকে আবেদন পত্রের নম্বর প্রদান করতে হবে। আপনাকে সবসময় এই নম্বরটি সংরক্ষণ করে রাখতে হবে কারণ এটির মাধ্যমে আপনি আপনার জন্ম নিবন্ধনের পরবর্তী অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারবেন। সেই সঙ্গে আপনি অবশ্যই “আবেদন পত্র প্রিন্ট করুন” অপশনটিতে ক্লিক করবেন। এতে করে আপনার আবেদন পত্র প্রিন্ট করার মত একটি কপি তারা আপনাকে দেবে। যা প্রিন্ট করে আপনাকে পরবর্তী 15 দিনের মধ্যেই  ইউনিয়ন পরিষদ অথবা পৌরসভায় প্রদান করতে হবে।

এটি শুধুমাত্র একটি আবেদন প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে আপনি আপনার জন্ম নিবন্ধন পাওয়ার একধাপ এগিয়ে গেলেন। পরবর্তী ধাপে আপনাকে অবশ্যই আপনার ইউনিয়ন পরিষদে অথবা পৌরসভায় যোগাযোগ করতে হবে। তারা বাকি কাজ করে দেবে অথবা পরবর্তীতে আপনাকে আর কি কাজ করতে হবে সেটা বলে দেবে।আশা করি কিভাবে আবেদন করতে হয় সেই প্রক্রিয়াটি বুঝে গেছেন। এভাবে আবেদন করার মাধ্যমে আপনি আপনার হাতে লেখা জন্ম নিবন্ধন অথবা পুরাতন জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করতে পারবেন।

জন্ম নিবন্ধন কিভাবে সংশোধন করব 

জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের জন্য https://bdris.gov.bd/br/correction সাইটে ভিজিট করে জন্ম নিবন্ধন তথ্য সংশোধন মেনুতে প্রবেশ করুন। ভুল তথ্য সংশোধনের জন্য সঠিক তথ্য ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস আপলোড করে আবেদন জমা দিন। এপ্লিকেশন আইডি সংগ্রহ করুন এবং সংশোধনের আবেদনপত্রটি A4 সাইজের কাগজে প্রিন্ট করে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ/ পৌরসভা/ সিটি কর্পোরেশন অফিসে যোগাযোগ করুন। জন্ম তারিখ বাদে জন্ম নিবন্ধন তথ্য সংশোধন করতে সরকারি ফি ৫০ টাকা লাগে। তবে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশেীদের জন্য জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে বাংলাদেশ মিশনে এর পরিমাণ ১ ইউএস ডলার।

আজকের এই পোস্টে আমি আপনাদের সাথে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম  জানাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আশা করছি আজকের আর্টিকেলে সে সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দিতে পেরেছি। এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকলে তা কমেন্ট করে জানাতে পারেন।আপনি সিভি লেখা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন আমাদের এই পৌষ্টের মাধ্যমে…..

Leave a Comment