খুশকি তাড়াতে ও চুল পড়া রোধে ৫টি কার্যকর ঘরোয়া উপায়

খুশকি ও চুল ঝরে পড়া খুব সাধারণ একটা সমস্যা। কম বেশি সকলেই আমরা এই প্রব্লেম দুটির ভুক্তভোগি। নানান কারণে এই সাধারণ কিন্তু বিরক্তিকর সমস্যার মুখোমুখি হই আমরা। চুলের অন্যতম শত্রু হলো খুশকি। এটি সাধারণ সমস্যা মনে হলেও অনেকটা ভোগান্তির কারণ হতে পারে। যাঁরা সারা বছরই প্রায় খুশকির সমস্যায় ভোগেন, তাঁদের জন্য় এই সময়টা আরও কঠিন হয়ে ওঠে। যাই হোক, এই শীতে আপনার ত্বকের পাশাপাশি চুলেরও প্রয়োজন বিশেষ যত্ন। শকির সমস্যা নারী ও পুরুষ উভয়ের মধ্যেই লক্ষ্য করা যায়। তবে নারীদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে খুশকির প্রবণতা বেশি পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। ঋতু, বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে একজন ব্যক্তির অন্তর্গত, খুশকি একটি গুরুতর সমস্যা। যা তাদের মানসিকতা এবং ত্বকে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। মানুষের শরীরে অনেকগুলো সমস্যার মধ্যে এটাও একটা সমস্যা। খুশকির কারণে মাথার চুল পরা বৃদ্ধি পায়।

খুশকি কি?

খুশকি মূলত এক ধরনের মৃত কোষ অথবা মরা চামড়া, যার কারণে ত্বকে বিভিন্ন সংক্রমণ দেখা দেয়, যেমন ফাঙ্গাস, ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ ও ব্রণ। খুশকি দূর করার জন্য কেমিক্যালযুক্ত উপাদান ব্যবহার করলে উপকারের বদলে ক্ষতি হওয়ার ভয় বেশি থাকে। তাই সবচেয়ে ভালো হয় ঘরোয়া উপায় মেনে প্রতিকার করতে পারলে। শীতকালে ত্বকেও যেমন নানা সমস্যা বাড়ে, আবার চুলেও সমস্যা দেখা দেয়। চুল এই সময়ে খুবই রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে থাকে। মাথার ত্বকে ম্যালাসেজিয়া নামক এক ধরনের ছত্রাক অথবা ইস্টের সংক্রমণ বেশি হলে অথবা অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ হলে মাথায় মৃত কোষ বেড়ে খুশকি হয়।

খুশকি দূর করার উপায়

প্রাচীনকাল থেকেই আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুযায়ী, খুশকির সমস্যা সমাধানে ব্যবহৃত হয়ে আসছে নিম, মেথি, ভৃঙ্গরাজ, জবা ফুল, অ্যালোভেরা এবং আমলকী।  খুশকি তাড়াতে ও চুল পড়া রোধে স্ক্যাল্প তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও আর্দ্রতা পেলে, ভালো থাকে। খুশকিও নিয়ন্ত্রণে থাকে। আসলে ঘরোয়া উপায়েও খুশকির সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। যেটা ভালো লাগে সে সেই পদ্ধতি ফলো করে উপকার পাবেন আশা করি।  এখানে আরেকটা কথা বলে রাখা ভালো যে, অনেকেরই অনেক জিনিসে অ্যালার্জি থাকে। কইভাবে স্ক্যাল্প তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও আর্দ্রতা পেলে, ভালো থাকে। খুশকিও নিয়ন্ত্রণে থাকে। আসলে ঘরোয়া উপায়েও খুশকির সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। খুশকি দূর করার ঘরোয়া উপায়-

নারিকেল তেল

নারিকেল তেল গরম করে নিন। তবে খুব বেশি গরম অবস্থায় ব্যবহার করতে যাবেন না, এতে হিতে বিপরীত হবে। তেল গরম করার পর কিছুক্ষণ রেখে দিন। হালকা গরম অবস্থায় এলে আঙুলের সাহায্যে ভালোভাবে স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করুন।  আবার নারকেল তেল এতে একটা লেবুর অর্ধেকটা রস মিশাতে হবে। এবার তেলটা ভালো করে মাথায় লাগিয়ে কয়েক মিনিট ম্যাসাজ করতে হবে। আধা ঘণ্টা পর মাথা ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে নিয়মিত ব্যবহার করলে খুশকি দূর হবে সহজেই। ন্যাচারাল এই পদ্ধতিটি  সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ফলো করুন।  এরপর শ্যাম্পু করে নিন। এতে চুল ঝলমলে সুন্দর হবে, খুশকিও থাকবে না। 

নিমপাতা

নিমের মধ্য়ে আছে অ্যান্টি মাইক্রোবায়াল ও অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান যা ড্যানড্রফ সারিয়ে তোলে। অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদানসমৃদ্ধ নিম পাতা শুধু যে খুশকি দূর করে তাই-ই না এর সাথে এটি  মাথার ত্বকের আরো নানা সমস্যার হাত থেকেও রক্ষা করে।যেমন মাথার ত্বকের ফুস্কুড়ি, চুলকানি,ফাঙ্গাস ইনফেকশন, অতিরিক্ত চুল পড়া। ব্রাজিলিয়ান জার্নাল অফ মাইক্রোবায়লজি’-তেও নিমের এই অ্যান্টি ফাঙ্গাল গুণ বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। চার কাপ পানিতে এক মুঠো নিম পাতা দিয়ে পানিটুকু ফুটাতে হবে। পানি ফুটে উঠলে নামিয়ে ঠান্ডা করে ছেঁকে নিতে হবে। সপ্তাহে দুই  থেকে তিন বার এই নিমের পানি শ্যাম্পু করার পর মাথায়  ঢেলে দিয়ে  খানিকক্ষণ পরে মাথা মুছে ফেলতে হবে। তাই এটি মাথার ত্বক সুরক্ষিত রাখতে ও খুশকি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে।

লেবুর রস

খুশকির সমস্যায় পাতি লেবু ব্যবহার ঘরোয়া রূপটানে বেশ জনপ্রিয়। এর মধ্য়ে প্রচুর পরিমাণে সাইট্রিক অ্যাসিড এবং ভিটামিন সি থাকে। এতে থাকা এসিড খুশকি তৈরিকারি ফাঙ্গাসের সাথে লড়ে এবং মাথার প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। ফলে চুল পড়াও কমে যায় উল্লেখযোগ্য হারে। কোয়ার্টার কাপ প্লেইন ইয়োগার্ট এর সাথে আধাটা লেবুর রস মিশিয়ে মিশ্রণটা মাথায় দিয়ে বিশ মিনিট রেখে মাথা শ্যাম্পু করে ফেলুন। তবে লেবুর রস কখনও সরাসরি চুলে ব্যবহার করবেন না। এর অ্যাসিডিক উপাদান আপনার চুলের ও স্ক্যাল্পের ক্ষতি করতে পারে। হেয়ার প্যাকে পাতিলেবু ব্যবহার করুন।

অ্যালোভেরা জেল

অ্যালোভেরা জেলের সাথে লেবুর রসের মিশ্রণও খুশকির সমস্যায় বেশ কার্যকরী। অ্যালো ভেরা ত্বকের রুক্ষতা কাটাতে প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। খুশকি দূর করার জন্য কেমিক্যালযুক্ত উপাদান ব্যবহার করলে উপকারের বদলে ক্ষতি হওয়ার ভয় বেশি থাকে। একটি বাটিতে অ্যালো ভেরা জেল ও দু’চামচ লেবুর রস ভাল করে মিশিয়ে মাথায় লাগিয়ে নিন। আধ ঘণ্টা পর ভাল করে জল দিয়ে ধুয়ে, তার পর শ্যাম্পু করুন।

 টি ট্রি অয়েল

অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান সমৃদ্ধ এই তেলটি খুশকি দূরীকরণে অত্যন্ত কার্যকর। টি ট্রি অয়েল ব্যবহার করুন শ্যাম্পু বা কন্ডিশনারের সাথে মিশিয়ে। এই টি ট্রি অয়েল সরাসরি স্ক্যাল্পে লাগিয়েও মালিশ করতে পারেন। সপ্তাহে দু’দিন করলে ফল দ্রুত পাওয়া যায়। এছাড়া, কয়েক ফোটা নারিকেল তেল অথবা অলিভ অয়েল এর সাথে মিশিয়ে মাথায় লাগিয়ে সম্ভব হলে পুরা রাত আর তা না হলে গোসলের আধা ঘণ্টা আগে মাথায় লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার কি দুইবার করুন।

খুশকিমুক্ত থাকার মূল শর্ত হলো পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা। তাই বাইরের ধুলোবালি যেনো মাথায় স্ক্যাল্পে না বসে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রয়োজনে বাইরে বের হলে স্কার্ফ বা টুপি দিয়ে চুল ঢেকে নিতে হবে। খুশকি দূর করার আরেকটি কার্যকরী উপায় হলো অ্যালোভেরা আর মেথি। সপ্তাহে একদিন অ্যালোভেরা অথবা আমলকীর রস মাথার স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করলে খুশকি দূর হওয়ার পাশাপাশি চুল হবে ঘন ও স্বাস্থ্যজ্জ্বল। স্ক্যাল্পের চিকিৎসা চললে বা কোনও সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঘরোয়া টোটকা কাজে লাগাবেন না।

আজকের এই পোস্টে আমি আপনাদের সাথে খুশকি দূর করার ঘরোয়া উপায় জানাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আশা করছি আজকের আর্টিকেলে সে সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দিতে পেরেছি। এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকলে তা কমেন্ট করে জানাতে পারেন।আপনি মেয়েদের চুল পড়ার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন আমাদের এই পৌষ্টের মাধ্যমে…..

Leave a Comment