সজনে গাছের পাতাকে বলা হয় অলৌকিক পাতা। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে পুষ্টিকর হার্ব। গবেষকরা সজনে পাতাকে বলে থাকেন, নিউট্রিশন্স সুপার ফুড। সজনে পাতা এনিমিয়াকে দূর করে। বারোমাসি সজনে জাত প্রায় সারা বছরই বার বার ফলন দেয়। গাছে সব সময় ফুল, কচি পড দেখা যায়। আমাদের দেশে ২-৩ প্রকার সজনে পাওয়া যায়। সজনে পাতার নাম তো আমরা ছোটকাল থেকেই শুনেছি। সজনে খেতে খেতে বড় হয়েছি। সজনে পাতার ভর্তা খেয়েছি, শাক খেয়েছি। গবেষকরা সজিনা পাতাকে বলে থাকেন, নিউট্রিশন্স সুপার ফুড এবং সজনে গাছকে বলা হয় মিরাক্কেল ট্রি। সে কারণেই বিজ্ঞানীরা এখন বলছেন যে, এ সময়ের একটি অলৌকিক পাতা হচ্ছে সজনে পাতা।
সজনে পাতা খাওয়ার নিয়ম
সজনে পাতাকে বলা হয় সুপার ফুড বা পুষ্টির ডিনামাইট। কারণ সজনে পাতা শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সজনে পাতায় ডিম থেকে প্রায় দুই গুন বেশি প্রোটিন রয়েছে এবং দুধের চেয়ে চার গুন বেশি ক্যালসিয়াম আছে। যা মানবদেহের জন্য খুব উপকারী। সজনে পাতা ভালো করে পরিষ্কার করে নিয়ে এটাকে ব্লেন্ডারে নিন। কিছু পানি যোগ করে টেস্টের জন্য কিছু আদা, কিছু জিরা, একটু বিট লবণ দিতে পারেন। প্রতিদিন সকাল বেলা ঘুম থেকে জেগে এক গ্লাস নরমাল পানিতে ২ চা চামচ সজনে পাতার গুড়া মিক্স করে ৩০ মিনিট রেখে হেঁটে আসবেন। এরপরে পাতার রসটা খেয়ে নিবেন তাহলে ফলটা ভালো পাবেন।
যদি সজনে পাতা জুস বানাতে ঝামেলা হয় অথবা সব দিন যদি জুস খেতে না পারেন, ভর্তা খান, তবে এটা কাঁচা হলে বেস্ট। যখন আপনি সিদ্ধ করলেন, এই যে নানাবিধ যে উপাদানগুলো আছে, এটি নষ্ট হয়ে যেতে থাকবে। রাতে ঘুমানোর সময় দুই চামচ সজনে পাতার গুড়া এক গ্লাস নরমাল পানিতে মিক্স করে রেখে দিবেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে সেকে খেয়ে নিবেন। গর্ভধারণের পরবর্তীতে সব মায়েদের জন্য সজিনা পাতা খুবই উপকারী। সজনে পাতায় আরো রয়েছে বিরানব্বই ধরনের পুষ্টি উপাদান, ছেচল্লিশ ধরনের এন্টি অক্সিডেন্ট, আঠারো ধরনের এমিনো এসিড ও আট ধরনের এসেনশিয়াল এমিনো এসিড। বিজ্ঞানীরা পুষ্টির দিক দিয়ে সজনেকে পুষ্টির ডিনামাইট আখ্যায়িত করে বলেন এ গাছটি থেকে পুষ্টি, ঔষধিগুণ ও সারা বছর ফলন পাওয়া যায় ।
আগেকার দিনে গ্রামেগঞ্জে প্রায় সব বাড়ির উঠোনেই থাকত সজনে গাছ। আর হাজার ও বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন ছোট বড় অসুখ সারানোর জন্য গ্রামের মানুষ জন এই সজিনা গাছের পাতা,ডাঁটা, ফুল ইত্যাদি ব্যবহার করত। সজনে পাতাকে আপনি সজনে সিজনে ভালো করে রোদে শুকান। শুকানোর পর এটাকে ক্রাশ করে ফেলেন। ছয় মাস এটা চমৎকার থাকবে এবং এক থেকে দুই চা চামচ সজনে পাতা যথেষ্ট আপনার পুষ্টির জন্য। আঠারো ধরনের এমিনো এসিড ও আট ধরনের এসেনশিয়াল এমিনো এসিড। কাঁচা পাতার রস খেতে পারলে তো কথাই নেই। এছাড়াও শত বছর ধরে প্রায় তিনশরও বেশি রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। প্রতিদিন এক চামচ সকালে, এক চামচ রাত্রে। ছয় মাস পর আপনি আপনার স্ট্রেংথ, আপনার কর্মক্ষমতা দেখে নিজেই বিস্মিত হবেন।
সজনে পাতার উপকারিতা
আমরা জানি যে, এখন ফাইবার বা আঁশকে খাদ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ কম্পোনেন্ট হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। আঁশ কোনো ঐচ্ছিক খাবার নয় যে, ইচ্ছা হলে খেলাম; ইচ্ছা না হলে খেলাম না। প্রচীন সভ্যতায় শরীর ও মন সুস্থ তথা রোগ নিরাময়ের জন্য একমাত্র ভেষজের প্রচলন ছিল। ভারতবর্ষে প্রাচীন কাল থেকেই ভেষজ তথা আয়ুর্বেদ চিকিৎসার ব্যবহার এখনও অবধি হয়ে আসছে। ভারতীয় আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র মতে, সজিনা গাছ ৩০০ রকমের রোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করে। আধুনিক বিজ্ঞানও এ ধারণাকে সমর্থন করে।
আমরা সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি খাবারের সাথে তুলনা করতে পারি। সেটি হচ্ছে গরুর দুধ। বিজ্ঞানীরা বলছেন, গরুর দুধের পুষ্টি এবং সজনে পাতার পুষ্টি অলমোস্ট কাছাকাছি। এছাড়াও শরীরের উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে এবং ডায়াবেটিস রোগীদের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। অপরদিকে, ‘পটাশিয়াম লবন’ কোন ক্ষতি করেনা। সাজনে ডাঁটাতে সোডিয়াম ক্লোরাইড নেই বললেই চলে। কাজেই এতে ব্ল্যাড প্রেসার নিয়ন্ত্রিত থাকে। মনে করা হয় সজনে গাছ টির প্রধান উৎস হল ভারত।পাঁচ হাজার বছর আগে থেকে এটি ভারতে জনপ্রিয়তা লাভ করে। পরে ধীরে ধীরে গ্রিক, রোমান ও মিশরীয় চিকিৎসা ব্যবস্থায় এটি অন্তর্ভূক হয়।
সজনে পাতার কিছু ঔষধি গুণ আছে এবং ঔষধি গুণের কারণে আর্থ্রাইটিস নিরাময়ে এটি দারুণ কার্যকর। ইতোমধ্যেই আমরা এক্সপেরিমেন্ট করেছি। সজনে কচি পাতার রস নিয়মিত ব্যবধানে খেলে রক্তের উচ্চচাপ ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে য়ায়। মায়ানমারের চিকিৎসকদের মতে, সাজিনার পাকা পাতার টাটকা রস দুবেলা আহারের ঠিক পূর্বে ২/৩ চামচ করে খেলে এক সপ্তাহের মধ্যে কমে যাবে। সজিনা পাতা বিভিন্ন ভাবে খাওয়া যেতে পারে, যেমন ভাজা,রান্না, বড়া,ভর্তা ও শুকিয়ে গুড়ো করে।নিয়মিত সজনে পাতা বা মরিঙ্গা খাওয়ার ফলে আমরা আমাদের দেহকে করতে পারি সুস্থ, সবল ও সতেজ।
গবেষণায় দেখা গেছে সজনে পাতা বেদনানাশক মূত্রকার অ্যান্টি টিউমার অ্যান্টি আলসার কোলেস্টেরল কমাতে ব্লাডপ্রেসার কমাতে, লিভার ঠিক রাখতে রক্তে সুগার নিয়ন্ত্রণে ত্বকরোগের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। সজনে পাতা বেটে রসুন, হরিদ্রা, লবন ও গোলমরিচ সহ খেলে কুকুরের বিষ্ট নষ্ট হয় এবং দুষ্টস্থানে প্রলেপ দিলে ৫/৬ দিনে ফুলা কমে যায় ও জ্বরে আরাম হয়। সজনে শরীরের প্রতিরোধক ব্যবস্থা শক্তিশালী করে। শরীর থেকে বিষাক্ত দ্রব্য, ভারি ধাতু অপসারণ এবং শরীরে রেডিয়েশন ও কেমোথেরাপি নিতে সহায়তা করে। প্রতিদিন ৬ চামচ সজিনা পাতার গুঁড়া একজন গর্ভবর্তী মায়ের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম।
আজকের এই পোস্টে আমি আপনাদের সাথে সজনে পাতা খাওয়ার নিয়ম জানাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আশা করছি আজকের আর্টিকেলে সে সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দিতে পেরেছি। এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকলে তা কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আপনি কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন আমাদের এই পৌষ্টের মাধ্যমে…..

সুপ্রিয় দর্শক আপনাকে স্বাগতম জানাচ্ছি আপনারা যারা বিভিন্ন সমস্যা নিরাময় করার জন্য বিভিন্ন বড় বড় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলো এবং বড় বড় ডাক্তারদের পরামর্শ গ্রহণ করতে চাচ্ছেন তাদের জন্য সকল ডাক্তারের পরামর্শ ও মতামত এবং সময় চিকিৎসা বিষয়ে সকল তথ্য সংগ্রহ করে আপনাদের কাছে আমি উপস্থাপন করব।