যদি কেউ আপনার বিরুদ্ধে কোন অবমাননাকর মন্তব্য করে থাকেন এবং আপনি সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করতে চান, তাহলে মানহানি ফাইল করার জন্য আপনার প্রয়োজনীয় কিছু অপরিহার্য বিষয়গুলি জানা গুরুত্বপূর্ণ। ফৌজদারি ব্যবস্থায় একজনের বিরুদ্ধে অপরাধ হলে পুরো সমাজ বা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাধ করা হয়েছে বলে গণ্য করা হয়। এ জন্য রাষ্ট্র বাদী হয়ে মামলা করে। কিন্তু মানহানির মামলায় রাষ্ট্র কোনো পক্ষ হয়ে মামলা করে না। বাংলাদেশ দন্ডবিধির ৪৯৯ ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তির খ্যাতি বা সুনাম নষ্ট করতে কেউ নিন্দাবাদ প্রণয়ন ও প্রকাশ করলে তাই মানহানি। এ অভিযোগে দন্ডবিধি (পেনাল কোড) ও দেওয়ানি কার্যবিধির বিধান মেনে টর্ট আইনের আলোকে মানহানির জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করা যায়।
প্রথমেই জানা যাক মানহানি কি
একজন ব্যক্তি যদি অন্য কোন ব্যক্তির সুনাম বা মান বা খ্যাতি যেটাই আমরা বলি না কেন, যদি সেটি উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে বা ঐ ব্যক্তির সুনাম/মান নষ্ট হবে জেনে শুনে শব্দের দ্বারা বা চিহ্ন ব্যবহারের মাধ্যমে বা কোন প্রতীক যা দৃশ্যমান তার মাধ্যমে নিন্দা প্রকাশ পায়, তাহলে ধরে নেওয়া হবে যে উক্ত শব্দ/চিহ্ন/প্রতীক দ্বারা ঐ ব্যক্তির মানহানি করা হয়েছে। কলঙ্ক দেওয়া, কুৎসা রটানো, লজ্জাকর অনুভূতি, মর্ম পীড়াদায়ক অনুভূতি, মিথ্যা অপবাদ দেওয়াকেই মানহানি বলা যেতে পারে।
একজন ব্যক্তির সম্মানের প্রতি অসম্মান করা হলে বা সম্মান বিষয়ে হানিকর কিছু বলা হলে সেটিকে সাধারণ অর্থে মানহানি বলা হয়। আপনি হয়ত ভাবছেন যে, এইভাবে হিসেব করলে তো চোরকেও চোর বলা যাবে না, কারণ এতে তার মানহানি হবে। কিন্তু, তা নয়। আপনি যেমন কারো সুনাম নষ্ট করার জন্য কোন নিন্দা প্রকাশ করতে পারেন না, তেমনি আপনি কিছু কিছু ক্ষেত্রে সুনাম নষ্ট হলেও, মানহানি হলেও সত্য কথা বলতে পারবেন। আইনে এমন কিছু ব্যতিক্রম অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে, যখন কোনো ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির নামে মানহানিকর কিছু বললে, লিখলে বা প্রচার করলেও মানহানি হবে না।
কিভাবে মানহানির মামলা করবেন
সাধারণত মানহানিকর উক্তি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি মানহানির মামলা দায়ের করতে পারে। তবে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৮ ধারা অনুসারে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ছাড়াও নিমোক্ত ব্যক্তিগন এই মামলা করতে পারবে। মানহানির মামলা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ছাড়া মামলা করলে আদালত তা আমলে নিবেন না। আপনার মানহানি হলে আপনি মামলা করতে পারবেন, আবার আপনার মৃত বাবা, মা বা কোন আত্মীয়ের যদি মানহানি হয়ে থাকে তাহলেও আপনি মামলা করতে পারবেন। তাছাড়া, অপ্রাপ্ত বয়স্ক বা মানসিক বা শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধী কারো মানহানি করা হলে তার পক্ষে তার অভিভাবক মানহানির মামলা করতে পারবে।
এককথায়, সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা তার পক্ষে অভিভাবক মানহানির মামলা করতে পারবেন। দন্ডবিধির ৫০০ ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তির মাধ্যমে কারও মানহানি প্রমাণিত হলে, ৫০১ ধারা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির মানহানিকর কোনো বিষয় মুদ্রণ (ছাপা) করলে এবং ৫০২ ধারা অনুযায়ী কারও জন্য মানহানিকর বিষয় সংবলিত কোনো দ্রব্য বিক্রি করলে সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদে কারাদন্ড ও অর্থদন্ড হবে। আর মানহানির অভিযোগে ক্ষতিপূরণ দাবি করা ব্যক্তির মামলা নিষ্পত্তি হবে দেওয়ানি আদালতে। ক্ষতিপূরণ ও দন্ডবিধির উভয় মামলা জামিনযোগ্য।
কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিংবা যেকোনো ওয়েবসাইটে যদি মানহানিকর ছবি বা বক্তব্য প্রকাশ করা হয় তাহলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এর ২৯ ধারার অধীনে মামলা করা যায় এবং পুলিশ এ ধারার অভিযোগে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারও করতে পারে। অর্থাৎ মানহানিকর বক্তব্য যদি অনলাইনের বাইরে হয় তাহলে এক ধরনের শাস্তি আর অনলাইনে হলে আরেক ধরনের শাস্তি। মানহানি অনলাইনে হলে তার জন্য সাইবার মামলা দায়ের করা যায়। যিনি মানহানির শিকার তিনি আদালতে অভিযোগ দায়ের করে জবানবন্দি প্রদানের মাধ্যমে মামলা দায়ের করতে হবে। আদালত সমন জারি করবেন অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে। অনলাইনে বা যেকোনো মাধ্যমে যদি মানহানির শিকার হন কেউ, তাহলে থানায় এজাহার দায়ের করা যায় কিংবা কোর্টে মামলা করা যায়। মানহানি অনলাইনে হলে তার জন্য সাইবার মামলা দায়ের করা যায়।
আজকের এই পোস্টে আমি আপনাদের সাথে মানহানি মামলা করার নিয়ম জানাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আশা করছি আজকের আর্টিকেলে সে সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দিতে পেরেছি। এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকলে তা কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আপনি নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়মাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন আমাদের এই পৌষ্টের মাধ্যমে ……

সুপ্রিয় দর্শক আপনাকে স্বাগতম জানাচ্ছি আমাদের দেশের সকলের এই নাগরিক অধিকার রয়েছে এবং এদেশের প্রতি বিশেষ কিছু দায়িত্ব রয়েছে। আর প্রত্যেকটি নাগরিকের প্রয়োজন হয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তথ্য যেগুলোর মাধ্যমে মানুষ চাকুরী ব্যবসা বা সম্পত্তি সংক্রান্ত সকল তথ্য প্রয়োজন হয় আমি আপনাদের কাছে উপস্থাপন করব।