কালোজিরার উপকারিতা এবং মধু ও কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম

কালোজিয়া শুধু ছোট ছোট কালো দানা নয়, এর মধ্যে রয়েছে বিস্ময়কর শক্তি। প্রাচীনকাল থেকে কালোজিরা মানবদেহের বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক ও প্রতিরোধক।  কালোজিরা এশিয়া এবং ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের একটি ফুলের উদ্ভিদ। এর বীজ হাজার হাজার বছর ধরে ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে ।

কালোজিরার তেল হল একটি ভেষজ উপাদান যা Nigella sativa উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত, যা পূর্ব ইউরোপ এবং পশ্চিম এশিয়ার একটি উদ্ভিদ। কালো জিরার ব্যবহার সর্বত্র এবং ইসলামে কালোজিরা খাওয়া নিয়ে প্রচুর আলোচনা রয়েছে এবং মাহনবী হযরত মুহাম্মদ ( সা: ) কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে বেশ গুরুত্ব সহকারে উম্মতদের উপদেশ দিয়েছেন এবং সবার প্রতি বলেছেন, “কালোজিরায় মৃত্যু ব্যতিত সকল রোগের ঔষধ রয়েছে। 

কালোজিরা চুলপড়া, মাথাব্যথা, অনিদ্রা, মাথা ঝিমঝিম করা, মুখশ্রী ও সৌন্দর্য রক্ষা, অবসন্নতা দুর্বলতা, নিষ্ক্রিয়তা ও অলসতা, আহারে অরুচি এবং মস্তিষ্ক শক্তি তথা স্মরণশক্তি বাড়ায়।  এ ছাড়া অনেকে গোপন শক্তি বাড়াতে চিকিৎসকের আশ্রয় নেন ও ভায়াগ্রা সেবন করেন! তাদের বলছি-এর জন্য ভায়াগ্রা নয়, এক চামুচ কালোজিরাই যথেষ্ট। কারণ কালোজিরায় এ ক্ষমতা অপরিসীম। 

কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম

কালোজিরা দুই ভাবে খাওয়া যায়। এক হলো এমনিতে কাঁচা চিবিয়ে এবং অন্যটি হলো কোনো কিছুর মাধ্যমে বা পিষিয়ে কালোজিরা খাওয়া। আবার অনেকে কালোজিরার সাথে মধু, রসুন, হলুদ, পুদিনা-পাতা, তুলসী পাতা ইত্যাদির মাধ্যমে কালোজিরা খায়। তাছাড়া এসবে রয়েছেও অনেক উপকারিতা। সদ্য জম্ম শিশুর মা-র ক্ষেত্রে কালোজিরার ভর্তা খেতে পারে। এক্ষেত্রে কালো জিরাকে পিষে মরিচ ও কিছুটা লবণ দিয়ে ভর্তা বানিয়ে খাওয়া যায়। 

মায়েদের জন্য কালোজিরা খাওয়ার এই নিয়মটা বেশ উপকারি। কালোজিরা খাওয়ার আরেকটা নিয়ম হচ্ছে কালোজিরার গুড়োর সাথে পেয়ারা পাতার রস মিক্স করে খাওয়া। এলার্জি জনিত ব্যক্তিদের জন্য কালোজিরা এবং পেয়ারা পাতার রস বেশ উপকারি। এভাবেও কালোজিরা খাওয়া যেতে হবে। সঠিক নিয়মে কালোজিরার তেলের সাথে এক কাপ পুদিনার পাতার রস এবং কমলার রস মিশিয়ে কালো জিরার মিশ্রণ খাওয়া যেতে পারে। এতে করে অতিরিক্ত দুচিন্তা দূর হবে। এটাও একটা নিয়ম কালো জিরা খাওয়ার। কালোজিরা আর মধু একসাথে খাওয়ার একটি নিয়ম রয়েছে। কালো জিরা মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে সর্দি-কাশি কিছুটা হলেও দূর হয়।

কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা সমূহ;

মাথাব্যথা ও চুলপড়া: মাথাব্যথায় কপালে উভয় চিবুকে ও কানের পার্শ্ববর্তী স্থানে দৈনিক ৩-৪ বার কালোজিরার তেল মালিশ করুণ। তিন দিন খালি পেটে চা চামচে এক চামচ করে তেল পান করুন উপকার পাবেন। লেবু দিয়ে সব মাথার খুলি ভালোভাবে ঘষুণ। ১৫ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন ও ভালোভাবে মাথা মুছে ফেলুন। তার পর মাথার চুল ভালোভাবে শুকানোর পর সম্পূর্ণ মাথার খুলিতে কালোজিরার তেল মালিশ করুন। এতে এক সপ্তাহেই চুলপড়া কমে যাবে।

সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে: সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে কালোজিরা দারুন কাজ করে থাকে আপনি বিভিন্ন কসমেটিক ব্যবহার বাদ দিয়ে প্রতিদিন যদি কালিজিরার ব্যবহার করুন তাহলে দেখবেন আপনার ত্বক ও স্বাস্থ্য দুটাই ভালো থাকবে। লেবুর রস কালোজিরা তেল একসঙ্গে মিশিয়ে খেলে মুখের ব্রণ ও দাগ দূর হবে। এছাড়া লেবুর রস ও কালোজিরার তেল মুখে লাগিয়েও ব্রণ দূর করা যায়। অনেকে মাথা ব্যথা রোগের জন্য কালোজিরা খেয়ে থাকেন। এটি একটি পুরনো ঘরোয়া প্রতিকার। সরিষার তেলের সঙ্গে কালোজিরা তেল মিশিয়ে হাঁটু বা অন্যান্য জয়েন্টে ম্যাসাজ করলে হাঁটু ও জয়েন্টের ব্যথা দূর করা সম্ভব।

যৌন দুর্বলতা: কালিজিরা নারী ও পুরুষের উভয়ের যৌন ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। বিশেষ করে পুরুষদের জন্য খুব উপকারী। নিয়মিত কালিজিরা সেবনে পুরুষত্বহীনতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কালোজিরা চুর্ণ ও অলিভ অয়েল, ৫০ গ্রাম হেলেঞ্চার রস ও ২০০ গ্রাম খাঁটি মধু একসঙ্গে মিশিয়ে সকালে খাবারের পর এক চামুচ করে খান। এতে গোপন শক্তি বৃদ্ধি পাবে।

ওজন কমাতে: চা বা গরম জলের সঙ্গে কালিজিরার তেল মিশিয়ে পান করলে হৃদেরাগে যেমন উপকার পাওয়া যায়, তেমনি শরীরের বাড়তি মেদও কমে। দই ও কালিজিরার মিশ্রণ প্রতিদিন এক মাস ধরে খেলে ১৫ কেজি পর্যন্ত ওজন কমানো যায় বলে যুক্তরাষ্ট্রের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমীক্ষায় জানা গেছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই মিশ্রণ শরীরের মেটাবলিজম কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে মেদের পরিমাণ কমতে থাকে। সেই সঙ্গে দ্রুত হ্রাস পায় দেহের ওজন।

মধু ও কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম

সকালে খালি পেটে কালোজিরা সাথে মধু খাওয়ার বেশ উপকারিতা রয়েছে। প্রথমে কালোজিরা গুলোকে একটু ভেজে নিতে হবে। তারপর গুড়ো করে ফেলতে হবে। সেই গুড়োগুলোকে সকালবেলা মধুর সাথে মিশিয়ে খেয়ে নিতে হবে। যদি সম্ভব হয়, তাহলে এককাপ কুম কুম গরম দুধ দিয়ে উক্ত মিশ্রণটিকে তৈরি করে খেয়ে নিতে হবে। এতে পেটের পীড়া দূর হবে। এইক্ষেত্রে অবশ্যই একটি জিনিস মনে রাখতে হবে, পরিমিত এবং সকালে খালি পেটে খেতে হবে। মূলত এটাই হচ্ছে খালি পেটে সকালে কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম। 

কালো জিরার তেলের সাথে রসুন ও মধু মিশিয়ে খাওয়ারও একটি নিয়ম রয়েছে। তবে এখানে আপনাকে প্রথম ইনডিকেট করতে হবে কেন রসুন দিয়ে খাবেন। মাথাব্যথা ভালো করার ক্ষেত্রে রসুন কালোজিরার সাথে খাওয়া যেতে পারে। রসুন রান্না করে মধুর সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন আবার কাঁচা অবস্থায় পিষিয়েও খেতে পারেন। তবে দুই ভাবেই এর কার্যকারীতা রয়েছে। রসুনের গুড়ার  সাথে মধু মিশিয়ে খেলে স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া সম্ভব। সালাদের সাথে রসুন মিক্স করে এবং তার সাথে মধু এবং কালোজিরা মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।

কালোজিরার গুড়ো এবং মধু মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। কালোজিরা চিবিয়ে আলাদা মধু দিয়েও খাওয়া যেতে পারে। এই রকম অনেকভাবে কালোজিরা মধু দিয়ে খাওয়া যায়। তবে কার্যকারীতা বৃদ্ধি করতে এই কয়েকটা নিয়ম দ্ধারাই বেশি উপকৃত হওয়া সম্ভব। এক বাটি কালোজিরা নিয়ে এগুলো ভালোভাবে পিষে দিনে কয়েকবার খাওয়া যেতে পারে। যেটুকু খাবেন, সেই নির্দিষ্ট অংশটুকুর সাথে মধু মিশিয়ে খেতে হবে। আরেকটি পদ্ধতি হলো দাঁত দিয়ে চিবিয়ে খাওয়া। এভাবে মধু ও কালো জিরা একসাথে খাওয়া যায় না। তবে আগে কালোজিরা খেয়ে পরে মধু খাওয়া যেতে পারে। এটাও কালো জিরা খাওয়ার একটি উপায়। 

আজকের এই পোস্টে আমি আপনাদের সাথে কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম জানাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আশা করছি আজকের আর্টিকেলে সে সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দিতে পেরেছি। এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকলে তা কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আপনি ভিটামিন ই ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন আমাদের এই পৌষ্টের মাধ্যমে…..

Leave a Comment