পাসপোর্ট তৈরি করার ও আবেদন ফরম পূরণ করার নিয়ম

আমাদের সবার মধ্যে এমন একটা ধারণা তৈরী হয়েছে যে দালাল ছাড়া বা টাকা খাওয়ানো ছাড়া নতুন পাসপোর্ট করা যায় না। পাসপোর্ট করতে গেলে হয়রানির স্বীকার হতে হয়। আমার ও পাসপোর্ট করতে দেয়ার আগে একই ধারণা ছিলো। একথা সত্যি যে এক সময় পাসপোর্ট বানাতে গেলে দালাল ছাড়া অনেক হয়রানির স্বীকার হতে হতো, তবে বর্তমানে এটা অনেকাংশে কমে গেছে। এবং আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি বর্তমানে পাসপোর্ট বানানোর প্রক্রিয়াটা অনেক সহজ। সরকার যেখানে পাসপোর্ট বানানোর প্রক্রিয়াকে সহজ করে দিয়েছে সেখানে কেন শুধু শুধু বাড়তি টাকা খরচ করে দালাল দিয়ে পাসপোর্ট করবেন?

পাসপোর্ট কি

বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য বিদেশ ভ্রমনের একটি অফিসিয়াল দলিল। জন্ম বা অভিবাসন সূত্রে বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশের নাগরিকদের দিয়ে থাকেন। বাংলাদেশ আকারে ছোট একটি বই যাতে আপনার ও আপনার দেশ সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য সেই সাথে আপনার বিদেশ ভ্রমনের অনুমতিসহ তথ্যাবলি উল্লেখ থাকে। বাংলাদেশের পাসপোর্ট দিয়ে ইসরায়েল ছাড়া অন্য সকল দেশে ভ্রমন কিংবা প্রবেশ করা যায় বৈধ ভাবে।

পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে

পাসপোর্ট করার নিয়ম এর মধ্যে আবেদনের স্বপক্ষে কিছু দলিল বা কাগজপত্র জমা দিতে হয়। চলুন জেনে নেই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে।

  • ১৮ বছরের নিচে হলে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন (BRC) সনদ।
  • ১৮-২০ বছর হলে জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) অথবা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন (BRC) সনদ।
  • ২০ বছরের বেশি হলে জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) আবশ্যক।
  • ন্যাশনাল আইডি কার্ড/স্মার্ট কার্ড অথবা জন্ম নিবন্ধন এর সত্যায়িত ফটোকপি।
  • ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, গাড়িচালক ও অন্যান্য পেশাগত সনদের সত্যায়িত ফটোকপি।
  • সরকারী চাকুরীজীবীদের জন্য No Objection Certificate (NOC) ।
  • পাসপোর্টে স্বামী বা স্ত্রীর নাম নতুন যুক্ত করলে কাবিননামা কম বয়সীদের ক্ষেত্রে আবশ্যিক।
  • আগে কোন পাসপোর্ট থেকে থাকলে সেগুলোর মুল কপি ও ডাটা পেইজের ফটোকপি।
  • ১৮ বছরের নিচের আবেদনকারীদের জন্য তাদের পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)।
  • ১৫ বছরের নিচের আবেদনকারীদের পিতা-মাতার পাসপোর্ট সাইজ ছবি ।
  • ৬ বছরের নিচের আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে পাসপোর্ট সাইজ ছবি ও 3R সাইজের (সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড) ম্যাট পেপারে ল্যাব প্রিন্ট রঙ্গিন ছবি দিতে হবে। 

পাসপোর্ট আবেদন ফরম পূরণ করার নিয়ম

অফলাইন ও অনলাইন দুই ভাবে পাসপোর্টের আবেদন ফরম পূরণ করা যায়। অফলাইনে পাসপোর্টের আবেদন ফরম পূরণ করতে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে পাসপোর্টের ফরম চাইলে অফিস থেকে তা বিনামূল্যে দেয়া হয়। আপনার নাম ও ব্যক্তিগত তথ্যাদি- যেমন: আপনার নাম, পিতা-মাতার নাম। এই নামগুলো যেন শিক্ষাগত সার্টিফিকেট কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্রের মতো একই হয়। কোনো তথ্য ভুল হলে পাসপোর্টে হতে সমস্যা হবে। মেইল অ্যাড্রেস ও মোবাইল নম্বর দেয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই যেটি ব্যবহৃত হচ্ছে সেটি দেয়া উচিত। টাকা জমা দেয়ার তারিখ এবং রিসিট নম্বর দিতে হবে। পাসপোর্ট টাইপ সিলেক্ট করতে হবে ‘ordinary’। যে অংশগুলো লাল স্টার মার্ক দেয়া রয়েছে, সেগুলো অবশ্যই পূরণ করতে হবে। সম্পূর্ণ ফরমটি পূরণ হলে পুনরায় এটি চেক করতে হবে। সব তথ্য টিক আছে কি না, তা যাচাই করে পরবর্তী ধাপে যেতে হবে। সবশেষে পূরণ করা ফরমটি সাবমিট করতে হবে

পাসপোর্ট অফিসে আবেদন ফরম জমা দেয়া

আবেদন ফরম সত্যায়িত হয়ে গেলে এর পরের ধাপ তা পাসপোর্ট অফিসে জমা দেয়া। অনলাইনে ফরম পূরণ করা হলে ফরমেই লিখা থাকবে তা কোন অফিস এ জমা দিতে হবে। আপনার অফিসে এপয়েনমেন্ট না লাগলে যে কোন দিন পাসপোর্ট অফিসে চলে যান। সিরিয়াল ধরে কাগজ জমা দিন কাউন্টারে। সব কিছু ঠিক থাকলে তারা আপনার আবেদন জমা নিবে এবং কোন রুমে যেতে হবে সেটা বলে দিবে। রুম নাম্বার অনুযারি পাঠানো রুমে গিয়ে আপনার আঙ্গুলের ছাপ দিন, ছবি তুলুন, চোখের স্ক্যান এবং সিগনেচার দিয়ে একটা রশীদ দিবে সেটা নিয়ে ভালো করে দেখুন কোন ইনফরমেশনে ভূল আছে কি না। এই রশীদে যে ইনফরমেশন দেখাবে তা আপনার পাসপোর্টে হুবুহু সেইম ই প্রিন্ট হবে। তাই কিছু ভূল দেখতে পেলে সাথে সাথে দ্বায়ীত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জানান। নাহলে পাসপোর্ট প্রিন্ট হয়ে গেলে আর সংশোধন করতে পারবেন না।

পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশন

সাধারণত আবেদন পত্র জমা দেয়ারনত৩-৭ দিনের মধ্যেই আপনাকে পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য ডাকা হবে। পুলিশ আপনার বাড়িতে আসতে পারে অথবা আপনাকে তাদের অফিসেও যেতে বলতে পারে অথবা অন্য কোথাও দেখা করতে বলতে পারে। এক্ষেত্রে আবেদনকারীকে কিছু ডকুমেন্ট তৈরি রাখতে বলা হয়। যেমন, জায়গা/জমির কাগজ, ইউটিলিটি বিলের কপি ইত্যাদি। ব্যাক্তিভেদে একেক জনের কাছে একেকটা চাওয়া হয়। পাসপোর্ট আবেদন ফর্মে যদি স্থায়ী ঠিকানা এবং বর্তমান ঠিকানা ভিন্ন হয় তাহলে দুই জায়গাতেই ভেরিফিকেশন হয়ে থাকে। আর একই ঠিকানা হলে এক জায়গাতেই হয়।

পাসপোর্ট সংগ্রহ করা

আপনার সব কিছু ঠিক ঠাক মত হয়ে গেলে আপনি আপনার আবেদনের ধরনের উপর ভিত্তি করে কিছুদিন পর মোবাইলে ও ইমেইলে মেসেজ পাবেন যে আপনার পাসপোর্ট কালেকশনের জন্য রেডি। মেসেজ পেলে আপনার ডেলিভারি স্লিপ ও আইডি কার্ড নিয়ে পাসপোর্ট সংগ্রহ করুন।

 আশা করি পাসপোর্ট করার নিয়ম ও খরচ সম্পর্কে আপনাদের সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছি।   আজকের আর্টিকেলে সে সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দিতে পেরেছি। এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকলে তা কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আপনি নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়মাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন আমাদের এই পৌষ্টের মাধ্যমে …… 

Leave a Comment