ট্রেড লাইসেন্স করার নিয়ম  এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

বর্তমান সময়ে যেকোনো ধরনের ব্যবসা করার জন্য  সর্বপ্রথম করণীয় হচ্ছে ট্রেড লাইসেন্স করা। ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করা সম্পূর্ণভাবে অবৈধ এবং আইনবিরোধী। তাই প্রত্যেক ব্যবসায়ীর ব্যবসার শুরু করার পর পরই ট্রেড লাইসেন্স করে নেওয়া উচিত। কেননা এর মাধ্যমেই যে কোন ব্যক্তি পরিপূর্ণভাবে একজন ব্যবসায়ী হওয়ার পাশাপাশি ব্যাংক থেকে ঋণ এবং ব্যবসায়িক সংগঠনের সদস্যতা পেয়ে থাকেন।   অনেকেই ট্রেড লাইসেন্স তৈরি করার পূর্ব ধারণা না থাকার জন্য, তাড়াহুড়ো করে ট্রেড লাইসেন্স তৈরি করতে গিয়ে অনেক ভুল করে ফেলেন। যার ফলে ভুল ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে ব্যবসা করার বৈধতা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই একটি পরিপূর্ণ নির্ভুল ট্রেড লাইসেন্স কিভাবে সহজে তৈরি করবেন সে বিষয়ে আলোচনা করব।

 ট্রেড লাইসেন্স কি

ট্রেড লাইসেন্স হল ব্যবসার অনুমতি পত্র। যা আপনার ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য সরকার থেকে সরকারের আইনি  এক্তিয়ারের মাঝে ব্যবসা করার অনুমতি পত্র কেই ট্রেড লাইসেন্স বলে। আমাদের ব্যবসার ধরন অনুযায়ী সাধারণত আলাদা আলাদা ভাবে ট্রেড লাইসেন্স তৈরি করতে হয়। একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের এবং ব্যবসায়ীর পরিচয়পত্র হলো ট্রেড লাইসেন্স। যে কারণে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন প্রয়োজনে তাদের কাজের প্রমাণ হিসেবে ট্রেড লাইসেন্স ব্যবহার করতে পারেন।

ট্রেড লাইসেন্স এর প্রয়োজনীয়তা

 ব্যবসা করার জন্য সরকারের অনুমতি পত্র হিসেবে ট্রেড লাইসেন্স প্রয়োজন।ট্রেড লাইসেন্স উদ্যোক্তাদের আবেদনের ভিত্তিতে প্রদান করা হয়। ট্রেড লাইসেন্স শুধুমাত্র লাইসেন্সধারী ব্যক্তির বা প্রতিষ্ঠানের নামে প্রদান করা হয় যা কোনোভাবে হস্তান্তরযোগ্য নয়। প্রতিটি ব্যবসার জন্য ভিন্ন ভিন্ন লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক। ব্যবসায়িক বিভিন্ন সুবিধা পেতে বা ব্যবসা সম্পর্কে বিভিন্ন জ্ঞান ও তথ্য পেতে একটি ব্যবসায়িক এসোসিয়েশনে যোগদানে প্রায় সবসময়ই ব্যবসায়ীদের সাহায্য করে। এসকল ব্যবসায়িক এসোসিয়েশনে যোগ দেওয়ার জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ট্রেড লাইসেন্স দেখাতে হয়।  বিদেশ থেকে কোন পণ্য আনতে বা বিদেশে রপ্তানি করতে, আমদানি ও রপ্তানি লাইসেন্স পেতে হলেও ট্রেড লাইসেন্স প্রয়োজন হয়।  বৈধভাবে কোনো ব্যবসা পরিচালনা করতে চাইলে ট্রেড লাইসেন্স করা অত্যাবশ্যক।

ট্রেড লাইসেন্স-এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

ব্যবসার ধরনের উপর ভিত্তি করে ট্রেড লাইসেন্স-এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রেও ভিন্নতা আসে।

এক মালিকানা ব্যবসার ক্ষেত্রে 

এক মালিকানা ব্যবসার ক্ষেত্রেধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স এর জন্য যে সকল কাগজপত্র প্রয়োজন। 

  •  নির্দিষ্ট আবেদন ফরম পূরণ।
  • নিজস্ব জায়গায় দোকান হলে ইউটিলিটি বিল ও হালনাগাদকৃত হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করার ফটোকপি।
  • নির্দিষ্ট ভাড়ার চুক্তিতে দোকান ব্যবহার করলে ৩০০ টাকার জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প কাগজে লেখা দোকান ভাড়ার চুক্তি পত্রের ফটোকপি।
  • আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
  • আবেদনকারীর ৩ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।

অংশীদারী ব্যবসার ক্ষেত্রে

  • দোকান /অফিস ভাড়ার সত্যায়িত চুক্তিপত্রের ফটোকপি
  • নিজের দোকান হলে ইউটিলিটি বিল এবং হালনাগাদ হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের ফটোকপি
  • ডিরেক্টরদের ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের কপি
  • ম্যানেজিং পার্টনারের তিন কপি ছবি
  • ম্যানেজিং পার্টনারের জাতীয় পরিচয়পত্র

ফ্যাক্টরি/ কারখানার ট্রেড লাইসেন্স

ফ্যাক্টরি কারখানার ট্রেড লাইসেন্স  ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স এর জন্য যে সকল কাগজপত্র প্রয়োজন।

  • নির্দিষ্ট আবেদন ফরম।
  • আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
  • ডি.সি.সি-এর নিয়মাবলী মেনে চলা হবে তা স্বীকার করে ৩০০ টাকার জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে অঙ্গীকারপত্র।
  • ম্যানেজিং ডিরেক্টরের তিন কপি ছবি
  • ম্যানেজিং ডিরেক্টরের জাতীয় পরিচয়পত্র  
  • অফিস বা দোকান ভাড়ার চুক্তিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি জায়গাটি অংশীদারদের কারোর নিজের হলে ইউটিলিটি বিল এবং হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের ফটোকপি।
  • অফিস বা দোকান ভাড়ার চুক্তিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি জায়গাটি অংশীদারদের কারোর নিজের হলে ইউটিলিটি বিল এবং হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের ফটোকপি।

ট্রেড লাইসেন্স করার পদ্ধতি

আমাদের ট্রেড লাইসেন্স করা নিয়ে অনেক জটিলতার সম্মুখীন হই। ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে বেশি জটিলতার কোন কারণ নেই। আমরা খুব সহজেই আপনি ট্রেড লাইসেন্স তৈরি করতে পারেন। আপনার দোকান যদি বৈধ হয় তাহলে ট্রেড লাইসেন্স তৈরি করা কোন ব্যাপার না। 

  • সর্বপ্রথম কাজ হচ্ছে ব্যবসায়িক কেন্দ্রের জন্য সঠিক অঞ্চল নির্ধারণ করা।
  • আই ফর্ম ও কে ফর্মনামে ট্রেড লাইসেন্স আবেদনের দুটি ভিন্ন ধরনের ফরম আছে। ছোট কিংবা সাধারণ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য আই ফর্ম এবং বড় ব্যবসার ক্ষেত্রে কে ফর্ম সংগ্রহ করতে হয়। ছোট কিংবা সাধারণ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য আই ফর্ম এবং বড় ব্যবসার ক্ষেত্রে কে ফর্ম সংগ্রহ করতে হয়। প্রতিষ্ঠানটি যে অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত সেই অঞ্চলের অফিস থেকেই এই ফর্মগুলো সংগ্রহ করা যাবে, যেগুলোর প্রতিটির দাম ১০ টাকা।
  • আবেদনপত্রের সাথে প্রয়োজনীয় সকল সত্যায়িত কাগজপত্র সংযুক্ত করা।
  • ব্যাংকে ট্রেড লাইসেন্স-এর ফি ভ্যাটসহ জমা দিয়ে রশিদ সংগ্রহ করতে হবে।
  • ব্যবসার ধরন অনুযায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন ফর্মটির সাথে ব্যাংকে ফি জমা রশিদটি সংযুক্ত করে স্থানীয় সরকারের অফিসে জমা দিতে হবে।
  • সবকিছু ঠিক থাকলে আবেদনকারী, ধার্যকৃত আবেদন ফি স্থানীয় সরকারের নির্ধারিত ব্যাংকে জমা দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করতে পারবেন। ট্রেড লাইসেন্স এর ফি কত হবে সেটা আপনার ব্যবসার ধরনের ওপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করবে। অর্থাৎ ২৯৪ টি ক্যাটাগরির প্রতিটি আলাদা আলাদাভাবে ফি নির্ধারণ করা আছে। এ ফি ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ২৬,০০০/- টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

সারসংক্ষেপ

আশা করি, এই লেখা থেকে ট্রেড লাইসেন্স সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে পেরেছেন। আপনার দোকানের জন্য যদি ট্রেড লাইসেন্স করতে চান। ব্যবসাকে বৈধকরণের জন্য ট্রেড লাইসেন্স একটি অপরিহার্য সনদ। সঠিক ও বৈধ ভাবে ব্যবসা পরিচালনায় ট্রেড লাইসেন্স-এর কোন বিকল্প নেই।  আপনি সরকারিভাবে বিদেশ যাওয়ার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন আমাদের এই পৌষ্টের মাধ্যমে …… 

Leave a Comment